আবৃত্তি নির্মাণের ক্ষেত্রে ভাবনাগুলো
আমরা প্রায় কবিতা আবৃত্তির চেষ্টা করি, কিন্তু কবিতাটির ভাব-বিষয়বস্তু উপলব্ধি না করেই পড়ার চেষ্টা করি। যা আবৃত্তির সঠিক নির্মাণ কৌশলের অন্তরায়। চলুন, এ বিষয়ে কিছু ভাবনা জেনে রাখি।
এক্ষেত্রে চারটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি-
১. প্রাক-প্রস্তুতি
২. প্রস্তুতি
৩. নির্মাণ
৪. উপস্থাপন
এক. প্রাক-প্রস্তুতি:
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিশ্চয়ই এমন কেউ পড়তে পারে না, যার অক্ষরজ্ঞানই নেই। আবার মাধ্যমিকে কেউ পড়তে পারে না, যার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জ্ঞান নেই। এভাবে প্রাথমিকে বা মাধ্যমিকে পড়তে হলে ন্যুনতম যে জ্ঞান এবং যোগ্যতা দরকার সেটাই হলো প্রাক বা পূর্ব প্রস্তুতি।
আবৃত্তির জন্যও আবশ্যক কিছু পূর্ব প্রস্তুতিমূলক জ্ঞান ও যোগ্যতা। সে পূর্ব প্রস্তুতিটুকু থাকলে আপনি কবিতার অর্থ বুঝবেন। বুঝবেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ও বিভিন্ন বয়সী মানুষ বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে অথবা অবস্থা ও অবস্থানে কীভাবে নিজেকে প্রকাশ করে।
যাদের এই পূর্ব প্রস্তুতিটুকু নেই তাদের জন্য এককথায় পরামর্শ হলো- বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর পরিমাণে পড়ুন এবং মানুষ ও প্রকৃতিকে গভীরভাবে অধ্যয়ন করে জানার চেষ্টা করুন। তাহলেই আপনার উপলব্ধি জ্ঞান উন্নত হবে এবং প্রকাশ ক্ষমতা পরিশীলিত হবে।
দুই. প্রস্তুতি:
এ পর্যায়ে আপনাকে প্রমিত উচ্চারণ জানতে হবে। জানতে হবে কবিতার ছন্দ, তাল-লয়, ইত্যাদি। এর সঙ্গে কবিতার অন্তর্গত ভাব ও রস বুঝতে হবে। একই সাথে স্বরের বিভিন্ন স্তর এবং নানা রঙের টোন কণ্ঠে ফুটিয়ে তুলতে জানতে হবে। আবৃত্তি বিষয়ক প্রচলিত কর্মশালায় মূলত এই বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করা হয়।
তিন. নির্মাণ:
এবার আপনি কবিতা পড়ুন। একবারে না বুঝলে কয়েকবার পড়ুন। কবিতা বোঝার পর আপনার মানসপটে কবিতার চিত্রকল্পগুলো খেয়াল করুন এবং গভীরভাবে অনুভব করুন। অর্থাৎ এই কবিতা পড়ার পর আপনার মনে কোন কোন দৃশ্য তৈরি হলো, সেগুলো ভালভাবে উপলব্ধি করুন। দৃশ্যপট তৈরি না হলে কবিতার সাথে মিলিয়ে মনের মধ্যে দৃশ্যপট তৈরি করুন।
দৃশ্যপট বা চিত্রকল্প তৈরি হয়ে গেলে এবার ভাবুন, কবিতা পড়ে আপনার মনের মধ্যে যে দৃশ্যপট তৈরি হলো, সেই দৃশ্যপট কবিতা শুনিয়ে কীভাবে শ্রোতার মনের মধ্যে তৈরি করা সম্ভব! অথবা এভাবে ভাবুন যে, আপনি যদি কবিতাটি কারো কাছে শুনতে চান তাহলে কীভাবে শুনতে চাইবেন!
অর্থাৎ, কবিতার দৃশ্যকল্প যেমন আপনাকে ভাবতে হবে, তেমনি এর একটি শ্রুতিরূপও আপনাকে ভাবতে জানতে হবে।
চার. উপস্থাপন:
সবশেষে প্রক্ষেপণ বা উপস্থাপনের পালা। এবার আপনাকে কবিতাটি বারবার পড়ে সেই কাঙ্ক্ষিত শ্রুতিরূপে পৌঁছাতে হবে, যা শুনে শ্রোতার মনের মধ্যে কবিতার সেই চিত্রকল্পগুলো ভেসে উঠবে, যে চিত্রকল্পগুলো আপনার মনের মধ্যেও তৈরি হয়েছিলো।
অনেক ক্ষেত্রে কবিতার চিত্রকল্পগুলো ভাবা সম্ভব হলেও শ্রুতিরূপটি ভাবা সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে চিত্রকল্পগুলো মাথায় রেখে কবিতাটি বারবার বিভিন্নভাবে পড়তে হবে। আর এভাবেই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত শ্রুতিরূপ!
শ্রুতিরূপটি প্রকাশের ক্ষেত্রে আপনাকে স্থান-কাল বিবেচনায় রেখে পরিশীলিতভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে। কণ্ঠে, চোখে, মুখে এবং কিঞ্চিৎ পরিমাণে দৈহিক সঞ্চালনে প্রকাশভঙ্গী পরিস্ফুট হবে।
এভাবেই একটি কবিতাকে আবৃত্তি রূপদানের চেষ্টা করলে সেটি হৃদয়গ্রাহী নির্মাণ হিসেবে বিবেচিত হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন