বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মরণে
অন্নদাশঙ্কর রায়
নরহত্যা মহাপাপ, তার চেয়ে পাপ আরো বড়ো
করে যদি যারা তাঁর পুত্রসম বিশ্বাসভাজন
জাতির জনক যিনি অতর্কিত তাঁরেই নিধন।
নিধন সবংশে হলে সেই পাপ আরো গুরুতর,
করে যদি যারা তাঁর পুত্রসম বিশ্বাসভাজন
জাতির জনক যিনি অতর্কিত তাঁরেই নিধন।
নিধন সবংশে হলে সেই পাপ আরো গুরুতর,
সারাদেশ ভাগী হয় পিতৃঘাতী সে ঘোর পাপের
যদি দেয় সাধুবাদ, যদি করে অপরাধ ক্ষমা।
কর্মফল দিনে দিনে বর্ষে বর্ষে হয় এর জমা
একদা বর্ষণ বজ্ররূপে সে অভিশাপের।
যদি দেয় সাধুবাদ, যদি করে অপরাধ ক্ষমা।
কর্মফল দিনে দিনে বর্ষে বর্ষে হয় এর জমা
একদা বর্ষণ বজ্ররূপে সে অভিশাপের।
রক্ত ডেকে আনে রক্ত, হানাহানি হয়ে যায় রীত।
পাশবিক শক্তি দিয়ে রোধ করা মিথ্যা মরীচিকা।
পাপ দিয়ে শুরু যার নিজেই সে নিত্য বিভীষিকা।
ছিন্নমস্তা দেবী যেন পান করে আপন শোণিত।
পাশবিক শক্তি দিয়ে রোধ করা মিথ্যা মরীচিকা।
পাপ দিয়ে শুরু যার নিজেই সে নিত্য বিভীষিকা।
ছিন্নমস্তা দেবী যেন পান করে আপন শোণিত।
বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! থেকে নাকো নীরব দর্শক
ধিক্কারে মুখর হও। হাত ধুয়ে এড়াও নরক।
অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়া
যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা
গৌরী যমুনা বহমান
তত দিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।
ধিক্কারে মুখর হও। হাত ধুয়ে এড়াও নরক।
অন্নদাশঙ্কর রায়ের ছড়া
যত দিন রবে পদ্মা মেঘনা
গৌরী যমুনা বহমান
তত দিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।
দিকে দিকে আজ অশ্র“গঙ্গা
রক্তগঙ্গা বহমান
নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান।
রক্তগঙ্গা বহমান
নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান।
ধন্য সেই পুরুষ
শামসুর রাহমান
শামসুর রাহমান
ধন্য সেই পুরুষ, নদীর সাঁতার পানি থেকে যে উঠে আসে
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে;
ধন্য সেই পুরুষ, নীল পাহাড়ের চূড়া থেকে যে নেমে আসে
প্রজাপতিময় সবুজ গালিচার মতো উপত্যকায়;
ধন্য সেই পুরুষ, হৈমন্তিক বিল থেকে সে উঠে আসে
রঙ-বেরঙের পাখি ওড়াতে ওড়াতে।
ধন্য সেই পুরুষ, কাহাতের পর মই-দেয়া ক্ষেত থেকে যে ছুটে আসে
ফসলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে;
ধন্য সেই পুরুষ, নীল পাহাড়ের চূড়া থেকে যে নেমে আসে
প্রজাপতিময় সবুজ গালিচার মতো উপত্যকায়;
ধন্য সেই পুরুষ, হৈমন্তিক বিল থেকে সে উঠে আসে
রঙ-বেরঙের পাখি ওড়াতে ওড়াতে।
ধন্য সেই পুরুষ, কাহাতের পর মই-দেয়া ক্ষেত থেকে যে ছুটে আসে
ফসলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে।
ধন্য আমরা, দেখতে পাই দূর দিগন্ত থেকে এখনো তুমি আসো
আর তোমারই প্রতীক্ষায়
ব্যাকুল আমাদের প্রাণ, যেন গ্রীষ্মকাতর হরিণ
জলধারার জন্যে। তোমার বুক ফুঁড়ে অহঙ্কারের মতো
ফুটে আছে রক্তজবা, আর
আমরা সেই পু®েপর দিকে চেয়ে থাকি, আমাদের
চোখের পলক পড়তে চায় না,
অপরাধে নত হয়ে আসে আমাদের দুঃস্বপ্নময় মাথা।
আর তোমারই প্রতীক্ষায়
ব্যাকুল আমাদের প্রাণ, যেন গ্রীষ্মকাতর হরিণ
জলধারার জন্যে। তোমার বুক ফুঁড়ে অহঙ্কারের মতো
ফুটে আছে রক্তজবা, আর
আমরা সেই পু®েপর দিকে চেয়ে থাকি, আমাদের
চোখের পলক পড়তে চায় না,
অপরাধে নত হয়ে আসে আমাদের দুঃস্বপ্নময় মাথা।
দেখ, একে একে সকলেই যাচ্ছে বিপথে অধঃপাত
মোহিনী নর্তকীর মতো
জুড়ে দিয়েছে বিবেক-ভোলানো নাচ মনীষার মিনারে,
বিশ্বস্ততা চোরা গর্ত খুঁড়ছে সুহৃদের জন্যে
সত্য খান খান হয়ে যাচ্ছে যখন তখন
কুমোরের ভাঙা পাত্রের মতো,
চাটুকারদের ঠোঁটে অষ্টপ্রহর ছোটে কথার তুবড়ি,
দেখ, যে কোন ফলের গাছ
সময়ে-অসময়ে ভরে উঠেছে শুধু মাকাল ফলে।
ঝল্সে-যাওয়া ঘাসের মতো শুকিয়ে যাচ্ছে মমতা
দেখ, এখানে আজ
কাক আর কোকিলের মধ্যে কোন ভেদ নেই।
নানা ছল-ছুতোয়
স্বৈরাচারের মাথায় মুকুট পরাচ্ছে ফেরেবক্ষাজের দল।
মোহিনী নর্তকীর মতো
জুড়ে দিয়েছে বিবেক-ভোলানো নাচ মনীষার মিনারে,
বিশ্বস্ততা চোরা গর্ত খুঁড়ছে সুহৃদের জন্যে
সত্য খান খান হয়ে যাচ্ছে যখন তখন
কুমোরের ভাঙা পাত্রের মতো,
চাটুকারদের ঠোঁটে অষ্টপ্রহর ছোটে কথার তুবড়ি,
দেখ, যে কোন ফলের গাছ
সময়ে-অসময়ে ভরে উঠেছে শুধু মাকাল ফলে।
ঝল্সে-যাওয়া ঘাসের মতো শুকিয়ে যাচ্ছে মমতা
দেখ, এখানে আজ
কাক আর কোকিলের মধ্যে কোন ভেদ নেই।
নানা ছল-ছুতোয়
স্বৈরাচারের মাথায় মুকুট পরাচ্ছে ফেরেবক্ষাজের দল।
দেখ, প্রত্যেকটি মানুষের মাথা
তোমার হাঁটুর চেয়ে এক তিল উঁচুতে উঠতে পারছে না কিছুতেই।
তোমাকে হারিয়ে
আমরা সন্ধ্যায় হারিয়ে যাওয়া ছায়ারই মতো
হয়ে যাচ্ছিলাম,
আমাদের দিনগুলি ঢেকে যাচ্ছিলো শোকের পোশাকে,
তোমার বিচ্ছেদের সঙ্কটের দিনে
আমরা নিজেদের ধক্ষংসস্তূপে ব’সে বিলাপে ক্রন্দনে আকাশকে ব্যথিত
করে তুলেছিলাম ক্রমাগত; তুমি সেই বিলাপকে
রূপান্তরিত করেছো জীবনের স্তুতিগানে, কেঁননা জেনেছি
জীবিতের চেয়েও অধিক জীবিত তুমি।
তোমার হাঁটুর চেয়ে এক তিল উঁচুতে উঠতে পারছে না কিছুতেই।
তোমাকে হারিয়ে
আমরা সন্ধ্যায় হারিয়ে যাওয়া ছায়ারই মতো
হয়ে যাচ্ছিলাম,
আমাদের দিনগুলি ঢেকে যাচ্ছিলো শোকের পোশাকে,
তোমার বিচ্ছেদের সঙ্কটের দিনে
আমরা নিজেদের ধক্ষংসস্তূপে ব’সে বিলাপে ক্রন্দনে আকাশকে ব্যথিত
করে তুলেছিলাম ক্রমাগত; তুমি সেই বিলাপকে
রূপান্তরিত করেছো জীবনের স্তুতিগানে, কেঁননা জেনেছি
জীবিতের চেয়েও অধিক জীবিত তুমি।
ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর রৌদ্র ঝরে
চিরকাল, গান হয়ে
নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা; যাঁর নামের ওপর
কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া,
ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পাখা মেলে দেয়
জ্যোৎস্নার সারস,
ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো
দুলতে থাকে স্বাধীনতা,
ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর ঝরে
মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধক্ষনি।
চিরকাল, গান হয়ে
নেমে আসে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা; যাঁর নামের ওপর
কখনো ধুলো জমতে দেয় না হাওয়া,
ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পাখা মেলে দেয়
জ্যোৎস্নার সারস,
ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো
দুলতে থাকে স্বাধীনতা,
ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর ঝরে
মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধক্ষনি।
স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত
স্বাধীনতা, এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো
নির্মলেন্দু গুণ
নির্মলেন্দু গুণ
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে-
কখন আসবে কবি?
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।
অথচ তখন প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেছে যখন গম্ভীর মুখে
কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তা’হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা’হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে-বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত কালো হাত।
তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ….।
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে-
কখন আসবে কবি?
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না,
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।
অথচ তখন প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেছে যখন গম্ভীর মুখে
কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তা’হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা’হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে, বেঞ্চে-বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি?
জানি, সেদিনের সব স্মৃতি মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত কালো হাত।
তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ….।
হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি
শিশুপার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে-আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।
সেদিন এই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর,
না পার্ক না ফুলের বাগান-এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখণ্ড অখণ্ড আকাশ যে-রকম, সে-রকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু-ধু মাঠ ছিল দুর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়।
আমাদের স্বাধীনতাপ্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু-ধু মাঠের সবুজে।
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে এই মাঠে ছুটে এসেছিল
কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক,
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নি¤œ-মধ্যবিত্ত, কর–ণ কেরানি, নারী বৃদ্ধ বেশ্যা ভবঘুরে আর
তোমাদের মতো শিশু পাতা কুড়ানিরা দল বেঁধে।
একটি কবিতা পড়া হবে তার জন্য কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের।
‘কখন আসবে কবি?’ ‘কখন আসবে কবি?’
শিশুপার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি
একদিন সব জানতে পারবে-আমি তোমাদের কথা ভেবে
লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।
সেদিন এই উদ্যানের রূপ ছিল ভিন্নতর,
না পার্ক না ফুলের বাগান-এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু একখণ্ড অখণ্ড আকাশ যে-রকম, সে-রকম দিগন্ত প্লাবিত
ধু-ধু মাঠ ছিল দুর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়।
আমাদের স্বাধীনতাপ্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল
এই ধু-ধু মাঠের সবুজে।
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে এই মাঠে ছুটে এসেছিল
কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক,
পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক,
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নি¤œ-মধ্যবিত্ত, কর–ণ কেরানি, নারী বৃদ্ধ বেশ্যা ভবঘুরে আর
তোমাদের মতো শিশু পাতা কুড়ানিরা দল বেঁধে।
একটি কবিতা পড়া হবে তার জন্য কী ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের।
‘কখন আসবে কবি?’ ‘কখন আসবে কবি?’
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা
জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা-
কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি:
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা
জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা-
কে রোধে তাঁহার বজ্রকণ্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি:
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
পনেরো আগস্ট
সৈয়দ শামসুল হক
এখনও রক্তের রঙ ভোরের আকাশে।
পৃথিবীও বিশাল পাখায় গাঢ় রক্ত মেখে
কবে থেকে ভাসছে বাতাসে।
অপেক্ষায়- শব্দের- শব্দেই হবে সে মুখর- আরো একবার
জয় বাংলা ধ্বনি লয়ে যখন সূর্যের আলো তার
পাখায় পড়বে এসে
ইতিহাস থেকে আরো কিছুক্ষণ পরে।
মানুষ তো ভয় পায় বাক্হীন মৃত্যুকেই,
তাই ওঠে নড়ে
থেকে থেকে গাছের সবুজ ডাল পাতার ভেতরে।
পাতাগুলো হাওয়া পায়,
শব্দ করে ওঠে আর খাতার পাতাও
ধরে ওঠে অস্থিরতা- কখন সে পাবে স্বর-
জয় বাংলা ঝড়- তাকে দাও
জন্মনাভি! বোঁটা থেকে দ্যাখো আজও
অভিভূত রক্ত যায় ঝরে
বাঙালির কলমের নিবের ভেতরে।
স্তব্ধ নয় ইতিহাস! বাংলাও সুদূরগামী
তেরোশত নদীর ওপরে ওই আজও তো নৌকোয়
রক্তমাখা জনকের উত্থান বিস্ময়!
টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে
কামাল চৌধুরী
কবরের নির্জন প্রবাসে
তোমার আত্মার মাগফেরাতের জন্য
যেসব বৃদ্ধেরা কাঁদে
আমাদের যেসব বোনেরা
পিতা, ভাই, সন্তানের মতো
তোমার পবিত্র নাম
ভালোবেসে হৃদয়ে রেখেছে
যেসব সাহসী লোক
বঙ্গোপসাগরের সব দুরন্ত মাঝির মতো
শোষিতের বৈঠা ধরে আছে
হে আমার স্বাধীনতার মহান স্থপতি
মহান প্রভুর নামে আমার শপথ
সেই সব বৃদ্ধদের প্রতি আমার শপথ
সেই সব ভাই বোন লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতি আমার শপথ
আমি প্রতিশোধ নেব
আমার রক্ত ও শ্রম দিয়ে
এই বিশ্বের মাটি ও মানুষের দেখা
সবচেয়ে মর্মস্পর্শী জঘন্য হত্যার আমি প্রতিশোধ নেব।
মাক্কুর ক্ষিপ্রতা ছেড়ে যে শ্রমিক এইমাত্র বেরিয়ে এসেছে
কালো চামড়ায় তার অসহায় ঘামগুলো সাদা হয়ে আছে
আমি তার দেহ থেকে ক্লান্তিগুলো খুলে নিতে চাই
আমি তার দুই চোখে প্রশান্তির অশ্রুজল চাই।
তিনদিন খাইনি বলে যাকে আমি চিৎকার করতে দেখেছি
হাড্ডিসার সেই কৃষকের প্রতি আমার কামনা
আমার বিদ্রোহ যেন জন্মজন্মান্তরে তাকে ভাই বলে ডাকে।
যে পথ নিয়েছি বেছে, জানি, সে পথে তোরণ নেই
ফুল কিংবা জীবনের পুষ্পশয্যা নেই
সে পথে রক্তের দাগ
মৃত্যুর আর প্রলোভন মাখানো রয়েছে
মুক্তিযুদ্ধের মতোন
তুমি হও আমাদের দুরন্ত প্রেরণা
আমি সব অতিক্রম করে
তোমার নৌকোকে নেব আকাক্সিক্ষত নদীর কিনারে।
মহান মানব ছিলে তুমি- দেবতা তো কখনো ছিলে না
দেবতা বানিয়ে যারা স্তুতি করেছে তোমার
জনসভা সেমিনারে বহুবার জীবন দিয়েছে
তোমার মৃত্যুর পরে
তারা কেউ আমাদের সাথে নেই আজ
সেবাদাসীদের মতো তারা সব ঘিরে আছে নতুন মনিব
হায়, এ রকম অপকর্ম শুধু বুঝি বাঙালির সাজে।
তোমার নিকটে ছিল যারা সেইসব তোমার খুনিরা
তারা কি বাঙালি ছিল?
না কি কোন ষড়যন্ত্রী দেশের সেবক?
সাম্রাজ্যবাদের কাছে নিজেদের বিকিয়েছে যারা
আমাদের ভাই নয় তারা
আমাদের জাতিসত্তা প্রেম আর ঐতিহ্যের হাজারো কাহিনী
ভুলে গিয়ে তারা সব বিদেশের সেবক হয়েছে!
আমার সমস্ত ঘৃণা থুথু আর বুকের আগুন
বাঙালি নামক সেই ঘৃণ্য সব খুনিদের প্রতি।
তীব্র প্রতিশোধ আমি ছুড়ে দেই খুনিদের মুখে
দ্যাখো, আগুন জ্বলছে আজ শুদ্ধ সব বাঙালির বুকে
এখন স্বদেশে চাই, শুধু চাই
তোমার সৈনিক কিছু সবল গোলাপ।
যেখানে ঘুমিয়ে আছো, শুয়ে থাকো
বাঙালির মহান জনক
তোমার সৌরভ দাও, দাও শুধু প্রিয়কণ্ঠ
শৌর্য আর অমিত সাহস
টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে আমাদের গ্রামগুলো
তোমার সাহস নেবে।
নেবে ফের বিপ্লবের দুরন্ত প্রেরণা।
সৈয়দ শামসুল হক
এখনও রক্তের রঙ ভোরের আকাশে।
পৃথিবীও বিশাল পাখায় গাঢ় রক্ত মেখে
কবে থেকে ভাসছে বাতাসে।
অপেক্ষায়- শব্দের- শব্দেই হবে সে মুখর- আরো একবার
জয় বাংলা ধ্বনি লয়ে যখন সূর্যের আলো তার
পাখায় পড়বে এসে
ইতিহাস থেকে আরো কিছুক্ষণ পরে।
মানুষ তো ভয় পায় বাক্হীন মৃত্যুকেই,
তাই ওঠে নড়ে
থেকে থেকে গাছের সবুজ ডাল পাতার ভেতরে।
পাতাগুলো হাওয়া পায়,
শব্দ করে ওঠে আর খাতার পাতাও
ধরে ওঠে অস্থিরতা- কখন সে পাবে স্বর-
জয় বাংলা ঝড়- তাকে দাও
জন্মনাভি! বোঁটা থেকে দ্যাখো আজও
অভিভূত রক্ত যায় ঝরে
বাঙালির কলমের নিবের ভেতরে।
স্তব্ধ নয় ইতিহাস! বাংলাও সুদূরগামী
তেরোশত নদীর ওপরে ওই আজও তো নৌকোয়
রক্তমাখা জনকের উত্থান বিস্ময়!
টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে
কামাল চৌধুরী
কবরের নির্জন প্রবাসে
তোমার আত্মার মাগফেরাতের জন্য
যেসব বৃদ্ধেরা কাঁদে
আমাদের যেসব বোনেরা
পিতা, ভাই, সন্তানের মতো
তোমার পবিত্র নাম
ভালোবেসে হৃদয়ে রেখেছে
যেসব সাহসী লোক
বঙ্গোপসাগরের সব দুরন্ত মাঝির মতো
শোষিতের বৈঠা ধরে আছে
হে আমার স্বাধীনতার মহান স্থপতি
মহান প্রভুর নামে আমার শপথ
সেই সব বৃদ্ধদের প্রতি আমার শপথ
সেই সব ভাই বোন লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতি আমার শপথ
আমি প্রতিশোধ নেব
আমার রক্ত ও শ্রম দিয়ে
এই বিশ্বের মাটি ও মানুষের দেখা
সবচেয়ে মর্মস্পর্শী জঘন্য হত্যার আমি প্রতিশোধ নেব।
মাক্কুর ক্ষিপ্রতা ছেড়ে যে শ্রমিক এইমাত্র বেরিয়ে এসেছে
কালো চামড়ায় তার অসহায় ঘামগুলো সাদা হয়ে আছে
আমি তার দেহ থেকে ক্লান্তিগুলো খুলে নিতে চাই
আমি তার দুই চোখে প্রশান্তির অশ্রুজল চাই।
তিনদিন খাইনি বলে যাকে আমি চিৎকার করতে দেখেছি
হাড্ডিসার সেই কৃষকের প্রতি আমার কামনা
আমার বিদ্রোহ যেন জন্মজন্মান্তরে তাকে ভাই বলে ডাকে।
যে পথ নিয়েছি বেছে, জানি, সে পথে তোরণ নেই
ফুল কিংবা জীবনের পুষ্পশয্যা নেই
সে পথে রক্তের দাগ
মৃত্যুর আর প্রলোভন মাখানো রয়েছে
মুক্তিযুদ্ধের মতোন
তুমি হও আমাদের দুরন্ত প্রেরণা
আমি সব অতিক্রম করে
তোমার নৌকোকে নেব আকাক্সিক্ষত নদীর কিনারে।
মহান মানব ছিলে তুমি- দেবতা তো কখনো ছিলে না
দেবতা বানিয়ে যারা স্তুতি করেছে তোমার
জনসভা সেমিনারে বহুবার জীবন দিয়েছে
তোমার মৃত্যুর পরে
তারা কেউ আমাদের সাথে নেই আজ
সেবাদাসীদের মতো তারা সব ঘিরে আছে নতুন মনিব
হায়, এ রকম অপকর্ম শুধু বুঝি বাঙালির সাজে।
তোমার নিকটে ছিল যারা সেইসব তোমার খুনিরা
তারা কি বাঙালি ছিল?
না কি কোন ষড়যন্ত্রী দেশের সেবক?
সাম্রাজ্যবাদের কাছে নিজেদের বিকিয়েছে যারা
আমাদের ভাই নয় তারা
আমাদের জাতিসত্তা প্রেম আর ঐতিহ্যের হাজারো কাহিনী
ভুলে গিয়ে তারা সব বিদেশের সেবক হয়েছে!
আমার সমস্ত ঘৃণা থুথু আর বুকের আগুন
বাঙালি নামক সেই ঘৃণ্য সব খুনিদের প্রতি।
তীব্র প্রতিশোধ আমি ছুড়ে দেই খুনিদের মুখে
দ্যাখো, আগুন জ্বলছে আজ শুদ্ধ সব বাঙালির বুকে
এখন স্বদেশে চাই, শুধু চাই
তোমার সৈনিক কিছু সবল গোলাপ।
যেখানে ঘুমিয়ে আছো, শুয়ে থাকো
বাঙালির মহান জনক
তোমার সৌরভ দাও, দাও শুধু প্রিয়কণ্ঠ
শৌর্য আর অমিত সাহস
টুঙ্গিপাড়া গ্রাম থেকে আমাদের গ্রামগুলো
তোমার সাহস নেবে।
নেবে ফের বিপ্লবের দুরন্ত প্রেরণা।
এই সিঁড়ি
রফিক আজাদ
রফিক আজাদ
এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে,
সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে-
বত্রিশ নম্বর থেকে
সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে
অমল রক্তের ধারা ব’য়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে।
মাঠময় শস্য তিনি ভালোবাসতেন,
আয়ত দু’চোখ ছিল পাখির পিয়াসী
পাখি তার খুব প্রিয় ছিলো-
গাছ-গাছালির দিকে প্রিয় তামাকের গন্ধ ভুলে
চোখ তুলে একটুখানি তাকিয়ে নিতেন,
পাখিদের শব্দে তার, খুব ভোরে, ঘুম ভেঙে যেতো।
স্বপ্ন তার বুক ভ’রে ছিল,
পিতার হৃদয় ছিল, স্নেহে-আর্দ্র চোখ-
এদেশের যা কিছু তা হোক না নগণ্য, ক্ষুদ্র
তার চোখে মূল্যবান ছিল-
নিজের জীবনই শুধু তার কাছে খুব তুচ্ছ ছিল :
স্বদেশের মানচিত্র জুড়ে প’ড়ে আছে
বিশাল শরীর…
তার রক্তে এই মাটি উর্বর হয়েছে,
সবচেয়ে রূপবান দীর্ঘাঙ্গ পুরুষ :
তার ছায়া দীর্ঘ হতে-হ’তে
মানিচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে, আদরে!
তার রক্তে প্রিয় মাটি উর্বর হয়েছে-
তার রক্তে সবকিছু সবুজ হয়েছে।
এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে,
সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে-
বত্রিশ নম্বর থেকে
সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে
অমল রক্তের ধারা ব’য়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে।
মাঠময় শস্য তিনি ভালোবাসতেন,
আয়ত দু’চোখ ছিল পাখির পিয়াসী
পাখি তার খুব প্রিয় ছিলো-
গাছ-গাছালির দিকে প্রিয় তামাকের গন্ধ ভুলে
চোখ তুলে একটুখানি তাকিয়ে নিতেন,
পাখিদের শব্দে তার, খুব ভোরে, ঘুম ভেঙে যেতো।
স্বপ্ন তার বুক ভ’রে ছিল,
পিতার হৃদয় ছিল, স্নেহে-আর্দ্র চোখ-
এদেশের যা কিছু তা হোক না নগণ্য, ক্ষুদ্র
তার চোখে মূল্যবান ছিল-
নিজের জীবনই শুধু তার কাছে খুব তুচ্ছ ছিল :
স্বদেশের মানচিত্র জুড়ে প’ড়ে আছে
বিশাল শরীর…
তার রক্তে এই মাটি উর্বর হয়েছে,
সবচেয়ে রূপবান দীর্ঘাঙ্গ পুরুষ :
তার ছায়া দীর্ঘ হতে-হ’তে
মানিচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহে, আদরে!
তার রক্তে প্রিয় মাটি উর্বর হয়েছে-
তার রক্তে সবকিছু সবুজ হয়েছে।
এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে,
সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে-
স্বপ্নের স্বদেশ ব্যেপে
সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে
অমল রক্তের ধারা ব’য়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে ॥
স্বপ্নের স্বদেশ ব্যেপে
সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে
অমল রক্তের ধারা ব’য়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে ॥
হন্তারকদের প্রতি
শহীদ কাদরী
শহীদ কাদরী
বাঘ কিংবা ভালুকের মতো নয়
বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা হাঙরের দল নয়
না, কোন উপমায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাবেনা।
তাদের পরনে ছিল ইউনিফর্ম,
বুট, সৈনিকের টুপি,
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের কথাও হয়েছিল,
তারা ব্যবহার করেছিল
এক্কেবারে খাঁটি বাঙালির মতো
বাংলাভাষা। অস্বীকার করার উপায় নেই ওরা মানুষের মতো
দেখতে, এবং ওরা মানুষই
ওরা বাংলার মানুষ
এর চেয়ে ভয়াবহ কোন কথা আমি আর শুনবোনা কোনদিন।
বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে আসা হাঙরের দল নয়
না, কোন উপমায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাবেনা।
তাদের পরনে ছিল ইউনিফর্ম,
বুট, সৈনিকের টুপি,
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাদের কথাও হয়েছিল,
তারা ব্যবহার করেছিল
এক্কেবারে খাঁটি বাঙালির মতো
বাংলাভাষা। অস্বীকার করার উপায় নেই ওরা মানুষের মতো
দেখতে, এবং ওরা মানুষই
ওরা বাংলার মানুষ
এর চেয়ে ভয়াবহ কোন কথা আমি আর শুনবোনা কোনদিন।
তাঁর নিজস্ব গন্তব্যে
অসীম সাহা
খুব ধীরে ধীরে তিনি সিঁড়ির প্রান্তে এসে দাঁড়ালেন।
মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে তখনো প্রতিধ্বনিত হয়নি বন্দনাগান
নিদ্রানগ্ন কাকেরা জেগে উঠে উন্মাতাল করে তোলেনি আকাশকে
শিশিরভেজা ঘাসগুলো সূর্যের আলোর প্রত্যাশায়
আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠবার আয়োজন করেনি তখনো;
অন্ধকার সরে গিয়ে আলোর পর্দায় প্রতিফলিত হয়নি
পৃথিবীকে স্বচ্ছ করে তোলার প্রস্তুতি।
চরাচরকে এতো শান্ত, এতো কোলাহলহীন মনে হয়নি আর কখনো;
যেন পৃথিবীতে এরকম শান্তি কখনো ছিলো না।
এ সময় আকাশের পর্দা ফাটিয়ে ভয়াবহ বেগে
গর্জন করে উঠলো মৃত্যু;
তারই শব্দে কেঁপে উঠলো পৃথিবী।
আর্তনাদ আর কোলাহল জড়াজড়ি করে এমন প্রবল হয়ে উঠলো যে,
তিনি আর ভেতরে স্থির থাকতে পারলেন না।
রাত্রির পোশাকেই ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে
সিঁড়ির প্রান্তে এসে দাঁড়ালেন।
হাতে তখনো তাঁর প্রিয় পাইপ,
চোখের চশমায় প্রতিফলিত বিস্ময়কর আলো,
একবার ঝলসে উঠেই পিছলে পড়ে হারিয়ে গেলো অন্ধকারে।
হাওয়ার ভেতর তাঁর বজ্রকণ্ঠ আছড়ে পড়লো কে?
তখন জলপাই রঙের পোশাকে আবৃত
বিপথগামী সৈনিকেরা অস্ত্র হাতে চিৎকার করে উঠলো- ঐ তো,
ঐ তো সেই বিশ্বাসঘাতক, হত্যা করো ওকে।
একটি পাতা বৃক্ষ থেকে উড়ে এসে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে
উপুড় হয়ে পড়ে রইলো তাঁর পায়ের কাছে।
কেউ তাঁর চোখের দিকে তাকালো না,
তাঁর চোখের দ্যুতির আড়ালে ঢাকা পড়লো তাদের কুৎসিত চিৎকার;
একঝলক বাতাস এসে তাঁর চুলের ওপর আছড়ে পড়ল
তিনি হাত দিয়ে তা পেছনে সরিয়ে দিয়ে
বজ্রগম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন কী চাই তোদের?
সঙ্গে-সঙ্গে একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র গর্জন করে উঠলো।
রক্তাক্ত-ক্ষতবিক্ষত দেহে তিনি লুটিয়ে পড়লেন সিঁড়ির ওপরে।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে যাদের উন্মত্ত ক্রোধ বিকীর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়লো,
তারা সেই বিশালকায় দেহকে সেখানে ফেলে রেখে
ভোরের আলোয় অতি দ্রুত সরে গেলো দৃশ্যের আড়ালে;
আর অস্ত্রের ভয়ানক গর্জনে নিদ্রামগ্ন কাকেরা তোলপাড় করলো মহাদিগন্ত।
হিমেল হাওয়ার চাপা গোঙানি ভারাক্রান্ত করে তুললো ভোরের বাতাস;
একপাল কুকুরের আকস্মিক চিৎকারে ভেঙে খানখান হয়ে গেলো নৈঃশব্দ;
দীঘির জলে স্তব্ধ মাছেরা তাদের লেজের ঝাপ্টায়
শূন্যতাকে ভেঙে টুকরো-টুকরো করে
চিরকালের জন্য মিলিয়ে গেলো পাতালে;
আর আকাশের নক্ষত্রেরা শোকাহত আত্মীয়ের মতো
অসহায় তাকিয়ে রইলো মহাকাশের দিকে।
নিথর দেহের ভারে তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই ছোট্ট নদী
যার উত্তাল জলে লাফিয়ে পড়া ছোট্ট কিশোরের আনন্দিত অনুভবে
একদিন হেসে উছেছিলো দু’পাড়ের মাটি।
আজ তাঁর বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে-কাঁদতে অবশ হয়ে এলো দেহ।
মনে হলো- আহা, তাঁর কতো আকাঙ্ক্ষাই পূর্ণ হলো না,
জীবন আর যৌবনের যে-দিনগুলো
লোহার খাঁচায় বন্দিত্ব বরণ করতে-করতে শূন্যতায় ডুবে গেলো,
রবীন্দ্রনাথের একটি গানকে চিরকালের করে তুলতে যে-জীবন
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে-করতেও থেমে গেলো মধ্যপথে;
যারা এক অর্ফিয়ূসের বীণার অনুরণন থামিয়ে দিতে
রক্তপাতকেই নির্দিষ্ট নিয়তি বলে ঘোষণা করে দিলো,
তিনি শেষবারের হাত তুলে তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন।
যে হ্যামিলনের বাঁশির শব্দে মানুষ, পাখি বৃক্ষ ও উদ্ভিদ
একদিন তাঁর পিছে-পিছে উন্মাদের মতো ছুটে গিয়েছিলো,
আজ তাঁর বাঁশির সুর ঝংকৃত হবার আগেই তারা পালিয়ে গেলো দূরে।
শুধু ভূমিপুত্র ও কন্যারা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো ধানের ক্ষেতে;
মাথার মাথাল ফেলে দিয়ে তারা বুক চাপড়াতে-চাপড়াতে
বিলাপ করতে লাগলো;
ধানের শীষের ভয়ার্ত কাঁপনে তাদের সেই বিলাপ
ভাসিয়ে নিয়ে গেলো দক্ষিণের হাওয়া;
একাত্তরের মতো আর একবার বুটের শব্দে
কেঁপে উঠলো স্বদেশের মাটি।
যেন পৃথিবীতে এরকম শান্তি কখনো ছিলো না।
এ সময় আকাশের পর্দা ফাটিয়ে ভয়াবহ বেগে
গর্জন করে উঠলো মৃত্যু;
তারই শব্দে কেঁপে উঠলো পৃথিবী।
আর্তনাদ আর কোলাহল জড়াজড়ি করে এমন প্রবল হয়ে উঠলো যে,
তিনি আর ভেতরে স্থির থাকতে পারলেন না।
রাত্রির পোশাকেই ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে
সিঁড়ির প্রান্তে এসে দাঁড়ালেন।
হাতে তখনো তাঁর প্রিয় পাইপ,
চোখের চশমায় প্রতিফলিত বিস্ময়কর আলো,
একবার ঝলসে উঠেই পিছলে পড়ে হারিয়ে গেলো অন্ধকারে।
হাওয়ার ভেতর তাঁর বজ্রকণ্ঠ আছড়ে পড়লো কে?
তখন জলপাই রঙের পোশাকে আবৃত
বিপথগামী সৈনিকেরা অস্ত্র হাতে চিৎকার করে উঠলো- ঐ তো,
ঐ তো সেই বিশ্বাসঘাতক, হত্যা করো ওকে।
একটি পাতা বৃক্ষ থেকে উড়ে এসে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে
উপুড় হয়ে পড়ে রইলো তাঁর পায়ের কাছে।
কেউ তাঁর চোখের দিকে তাকালো না,
তাঁর চোখের দ্যুতির আড়ালে ঢাকা পড়লো তাদের কুৎসিত চিৎকার;
একঝলক বাতাস এসে তাঁর চুলের ওপর আছড়ে পড়ল
তিনি হাত দিয়ে তা পেছনে সরিয়ে দিয়ে
বজ্রগম্ভীর স্বরে বলে উঠলেন কী চাই তোদের?
সঙ্গে-সঙ্গে একটি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র গর্জন করে উঠলো।
রক্তাক্ত-ক্ষতবিক্ষত দেহে তিনি লুটিয়ে পড়লেন সিঁড়ির ওপরে।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে যাদের উন্মত্ত ক্রোধ বিকীর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়লো,
তারা সেই বিশালকায় দেহকে সেখানে ফেলে রেখে
ভোরের আলোয় অতি দ্রুত সরে গেলো দৃশ্যের আড়ালে;
আর অস্ত্রের ভয়ানক গর্জনে নিদ্রামগ্ন কাকেরা তোলপাড় করলো মহাদিগন্ত।
হিমেল হাওয়ার চাপা গোঙানি ভারাক্রান্ত করে তুললো ভোরের বাতাস;
একপাল কুকুরের আকস্মিক চিৎকারে ভেঙে খানখান হয়ে গেলো নৈঃশব্দ;
দীঘির জলে স্তব্ধ মাছেরা তাদের লেজের ঝাপ্টায়
শূন্যতাকে ভেঙে টুকরো-টুকরো করে
চিরকালের জন্য মিলিয়ে গেলো পাতালে;
আর আকাশের নক্ষত্রেরা শোকাহত আত্মীয়ের মতো
অসহায় তাকিয়ে রইলো মহাকাশের দিকে।
নিথর দেহের ভারে তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই ছোট্ট নদী
যার উত্তাল জলে লাফিয়ে পড়া ছোট্ট কিশোরের আনন্দিত অনুভবে
একদিন হেসে উছেছিলো দু’পাড়ের মাটি।
আজ তাঁর বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে-কাঁদতে অবশ হয়ে এলো দেহ।
মনে হলো- আহা, তাঁর কতো আকাঙ্ক্ষাই পূর্ণ হলো না,
জীবন আর যৌবনের যে-দিনগুলো
লোহার খাঁচায় বন্দিত্ব বরণ করতে-করতে শূন্যতায় ডুবে গেলো,
রবীন্দ্রনাথের একটি গানকে চিরকালের করে তুলতে যে-জীবন
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে-করতেও থেমে গেলো মধ্যপথে;
যারা এক অর্ফিয়ূসের বীণার অনুরণন থামিয়ে দিতে
রক্তপাতকেই নির্দিষ্ট নিয়তি বলে ঘোষণা করে দিলো,
তিনি শেষবারের হাত তুলে তাদেরকে ক্ষমা করে দিলেন।
যে হ্যামিলনের বাঁশির শব্দে মানুষ, পাখি বৃক্ষ ও উদ্ভিদ
একদিন তাঁর পিছে-পিছে উন্মাদের মতো ছুটে গিয়েছিলো,
আজ তাঁর বাঁশির সুর ঝংকৃত হবার আগেই তারা পালিয়ে গেলো দূরে।
শুধু ভূমিপুত্র ও কন্যারা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো ধানের ক্ষেতে;
মাথার মাথাল ফেলে দিয়ে তারা বুক চাপড়াতে-চাপড়াতে
বিলাপ করতে লাগলো;
ধানের শীষের ভয়ার্ত কাঁপনে তাদের সেই বিলাপ
ভাসিয়ে নিয়ে গেলো দক্ষিণের হাওয়া;
একাত্তরের মতো আর একবার বুটের শব্দে
কেঁপে উঠলো স্বদেশের মাটি।
অবশেষে যেই নগরীতে তাঁর জীবন বয়ে গেছে বিদ্যুতের বেগে,
সেই প্রিয়তম নগরী তাঁকে বিদায় জানালো চিরকালের জন্য।
কিন্তু যেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুরন্ত কিশোর
জানিয়ে দিয়েছিলো স্রোতস্বিনীকে সে বয়ে যাবে
পৃথিবীর সর্বশেষ সীমান্ত অবধি,
সেই মধুমতী কেঁদে কেঁদে আকুল হলো;
কেবল সে-ই তাঁকে পরম আদরে টেনে নিলো তার বুকে
যেন এক ক্ষুধার্ত মাতৃহৃদয় ফিরে পেলো তার হারানো সন্তানকে।
ঢেউয়ের তালে-তালে লক্ষ-লক্ষ মানুষের করুণ বিলাপে
ঝুরঝুর করে ঝরে পড়তে লাগলো দু’পাড়ের মাটি,
তরঙ্গের শীর্ষদেশে একটি স্বাধীন স্বদেশ তার দেহ ও আত্মাসহ
একা-একা ভেসে যেতে লাগলো তাঁর জন্মভূমির দিকে;
আর মধুমতীর দুই তীর কান্নায় ভাসিয়ে দিয়ে
মৃত্যু তাঁকে পৌঁছে দিলো তাঁর নিজস্ব গন্তব্যে।
সেই প্রিয়তম নগরী তাঁকে বিদায় জানালো চিরকালের জন্য।
কিন্তু যেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুরন্ত কিশোর
জানিয়ে দিয়েছিলো স্রোতস্বিনীকে সে বয়ে যাবে
পৃথিবীর সর্বশেষ সীমান্ত অবধি,
সেই মধুমতী কেঁদে কেঁদে আকুল হলো;
কেবল সে-ই তাঁকে পরম আদরে টেনে নিলো তার বুকে
যেন এক ক্ষুধার্ত মাতৃহৃদয় ফিরে পেলো তার হারানো সন্তানকে।
ঢেউয়ের তালে-তালে লক্ষ-লক্ষ মানুষের করুণ বিলাপে
ঝুরঝুর করে ঝরে পড়তে লাগলো দু’পাড়ের মাটি,
তরঙ্গের শীর্ষদেশে একটি স্বাধীন স্বদেশ তার দেহ ও আত্মাসহ
একা-একা ভেসে যেতে লাগলো তাঁর জন্মভূমির দিকে;
আর মধুমতীর দুই তীর কান্নায় ভাসিয়ে দিয়ে
মৃত্যু তাঁকে পৌঁছে দিলো তাঁর নিজস্ব গন্তব্যে।
কফিন কাহিনী
মহাদেব সাহা
মহাদেব সাহা
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি কফিন
একজন বলল দেখো ভিতরে রঙিন
রক্তমাখা জামা ছিল হয়ে গেছে ফুল
চোখ দু’টি মেখে মেখে ব্যথিত বকুল!
একজন বলল দেখো ভিতরে রঙিন
রক্তমাখা জামা ছিল হয়ে গেছে ফুল
চোখ দু’টি মেখে মেখে ব্যথিত বকুল!
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে এক শবদেহ
একজন বলল দেখো ভিতরে সন্দেহ
যেমন মানুষ ছিল মানুষটি নাই
মাটির মানচিত্র হয়ে ফুটে আছে তাই!
একজন বলল দেখো ভিতরে সন্দেহ
যেমন মানুষ ছিল মানুষটি নাই
মাটির মানচিত্র হয়ে ফুটে আছে তাই!
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি শরীর
একজন বলল দেখো ভিতরে কী স্থির
মৃত নয় দেহ নয় দেশ শু’য়ে আছে
সমস্ত নদীর উৎস হৃদয়ের কাছে।
একজন বলল দেখো ভিতরে কী স্থির
মৃত নয় দেহ নয় দেশ শু’য়ে আছে
সমস্ত নদীর উৎস হৃদয়ের কাছে।
চারজন দেবদূত এসে ঘিরে আছে একটি কফিন
একজন বলল দেখো ভিতরে নবীন
হাতের আঙুলগুলি আরক্ত করবী
রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি।
একজন বলল দেখো ভিতরে নবীন
হাতের আঙুলগুলি আরক্ত করবী
রক্তমাখা বুক জুড়ে স্বদেশের ছবি।
হে বাঙালি যিশু
মুহম্মদ নূরুল হুদা
মুহম্মদ নূরুল হুদা
চল্লিশ বছর যায়, তোমাকে স্মরণ করে তোমার বাঙালি;
চল্লিশ হাজার যাবে, তোমার শরণ নেবে তোমার বাঙালি।
চল্লিশ হাজার যাবে, তোমার শরণ নেবে তোমার বাঙালি।
সতত বহতা তুমি জন্মে-জন্মে বাঙালির শিরায় শিরায়
সতত তোমার পলি হিমাদ্রি শিখর থেকে বীর্যের ব্রীড়ায়
দরিয়ায় দ্বীপ হয়ে যায়, যে-দরিয়া বাংলার সীমানা বাড়ায়,
যে-দরিয়া তোমার তরঙ্গ হয়ে কাল থেকে কালান্তরে যায় :
আজন্ম বাঙালি তুমি, আমৃত্যু বাঙালি,
তুমি নিত্য-বিবর্তিত এই লালসবুজের জাতিস্মর মায়ায়-ছায়ায়।
সতত তোমার পলি হিমাদ্রি শিখর থেকে বীর্যের ব্রীড়ায়
দরিয়ায় দ্বীপ হয়ে যায়, যে-দরিয়া বাংলার সীমানা বাড়ায়,
যে-দরিয়া তোমার তরঙ্গ হয়ে কাল থেকে কালান্তরে যায় :
আজন্ম বাঙালি তুমি, আমৃত্যু বাঙালি,
তুমি নিত্য-বিবর্তিত এই লালসবুজের জাতিস্মর মায়ায়-ছায়ায়।
সেই কবে নেমেছিলে মধুমতী-তীরে, অনন্তর শৈশবের ঘুরন্ত লাটিম
গঙ্গা-পদ্মা আর জাতিমা-র সুখী-দুখী নীড়ে; সীমা নয়, চিনেছো অসীম;
যৌবনে গিয়েছো চলে পল্লীমা-র কোল ছেড়ে দেশমা-র সব আঙিনায়,
তোমার পায়ের চিহ্ন এ বাংলার ঘরে-ঘরে,
সব ধর্ম-বর্ণ-গন্ধ, বাঙালির সব মোহনায়।
গঙ্গা-পদ্মা আর জাতিমা-র সুখী-দুখী নীড়ে; সীমা নয়, চিনেছো অসীম;
যৌবনে গিয়েছো চলে পল্লীমা-র কোল ছেড়ে দেশমা-র সব আঙিনায়,
তোমার পায়ের চিহ্ন এ বাংলার ঘরে-ঘরে,
সব ধর্ম-বর্ণ-গন্ধ, বাঙালির সব মোহনায়।
না, তুমি আর শরীরী মানুষ নও সব ক্ষণ-জীবিতের মতো;
না, তুমি আর অশরীরী ছায়া নও মৃত্যুময় মৌনতার মতো।
তুমি নিত্য প্রমুক্ত চিত্ততা, তুমি নিত্য স্বাধীনতা, শুদ্ধ মানবতা;
ব্যক্তি তুমি, জাতি তুমি,
তামাটে জাতির বুকে মানুষের অভ্র-অমরতা।
না, তুমি আর অশরীরী ছায়া নও মৃত্যুময় মৌনতার মতো।
তুমি নিত্য প্রমুক্ত চিত্ততা, তুমি নিত্য স্বাধীনতা, শুদ্ধ মানবতা;
ব্যক্তি তুমি, জাতি তুমি,
তামাটে জাতির বুকে মানুষের অভ্র-অমরতা।
তোমার শরীর এক মাটি-বীজ, শস্য তার বেড়ে যায় জ্যামিতিক হারে;
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ-মাইলের সীমানায় তোমার দেহের মাপ নেই শুধু আঁকা;
তোমার অনিদ্র আত্মা অনঙ্গ উড়াল-সেতু মহাজীবনের এপারে-ওপারে,
বিশ্ববাঙালির হাতে দেশে-দেশে কালে-কালে
তুমি সার্বভৌম বাঙালি পতাকা।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ-মাইলের সীমানায় তোমার দেহের মাপ নেই শুধু আঁকা;
তোমার অনিদ্র আত্মা অনঙ্গ উড়াল-সেতু মহাজীবনের এপারে-ওপারে,
বিশ্ববাঙালির হাতে দেশে-দেশে কালে-কালে
তুমি সার্বভৌম বাঙালি পতাকা।
ঘাতকেরা আত্মঘাতী, সময়ের রায়ে তারা নিশ্চিতই নির্বংশ সবাই,
নির্বীর্যের দেশে গত, তারা তো করে না আর বংশের বড়াই ।
বাঙালি বীরের জাতি, তুমি সেই চিরঞ্জীব মানবিক শিখা,
কালের কপোল-তলে তোমার পতাকা আঁকে বাঙালির চির জয়টীকা।
নির্বীর্যের দেশে গত, তারা তো করে না আর বংশের বড়াই ।
বাঙালি বীরের জাতি, তুমি সেই চিরঞ্জীব মানবিক শিখা,
কালের কপোল-তলে তোমার পতাকা আঁকে বাঙালির চির জয়টীকা।
শিশু তুমি, প্রজন্মের ঘরে-ঘরে আগত-ও-অনাগত শিশু,
যিশু তুমি, তোমার শোণিত-¯্রােতে পাপমুক্ত সন্তানেরা, হে বাঙালি যিশু।
তোমার নিষ্পাপ চোখে প্রজাপতি, শাদা পাল, বিলঝিল, নদী,
হ্রদ-পথ-জনপদ ঘুরন্ত ঘুঙুর হয়ে বেজে চলে কাল-নিরবধি;
শিশু তুমি যিশু তুমি, তুমি পিতা, বাঙালির জাতিপিতা
মানবধর্মের শিখা, আদিহীন অন্তহীন ভবিষ্য অবধি।
যিশু তুমি, তোমার শোণিত-¯্রােতে পাপমুক্ত সন্তানেরা, হে বাঙালি যিশু।
তোমার নিষ্পাপ চোখে প্রজাপতি, শাদা পাল, বিলঝিল, নদী,
হ্রদ-পথ-জনপদ ঘুরন্ত ঘুঙুর হয়ে বেজে চলে কাল-নিরবধি;
শিশু তুমি যিশু তুমি, তুমি পিতা, বাঙালির জাতিপিতা
মানবধর্মের শিখা, আদিহীন অন্তহীন ভবিষ্য অবধি।
বাঙালি তোমাকে চায়, তুমি চাও বাঙালির ভালো :
বাঙালি মানুষ হয় বুকে যদি মুজিবের আলো।
বাঙালি মানুষ হয় বুকে যদি মুজিবের আলো।
প্রিয় স্বাধীনতা
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
হাবীবুল্লাহ সিরাজী
তেল কুচকুচে ডুমুরের মতো রাত
হঠাৎ ফিনকি দেয়া আলোর মধ্যে
খানখান ভেঙে পড়লে
বারুদ ও বিদ্যুতে কোথাকার বসতি কার?
মাঠের পর মাঠ খর্খরে চৈত্রে জমাট;
শুরু আরো আগে, তারো আগে
জ্বলতে-জ্বলতে, পুড়তে-পুড়তে
বৈশাখের শেষে প্রথম ধারায়
পাটপাতা থেকে ধানের গোছা
শিস দিয়ে যায় বাংলাদেশ
হাঁটু মুড়ে আরো একবার দেখে তার অস্তিত্বের সীমা;
পশ্চিমে কী পুবে, উত্তর থেকে দক্ষিণ সাগরে
শোনে সেই রক্তের ডাক- যদি আর একটা গুলি চলে...
টলমল মেঘের নিচে ভেসে যাচ্ছে ভাদ্রের তাল
পিঠে-পিঠে দেয়াল, ঘামে-নুনে মাখামাখি তিন শূন্য তিন
চুলে জট; জোঁক টানে, মশা খায়
‘আলম তোর কাছে বিড়ি আছে’
আশ্বিন-কার্তিক যায়, কে খোঁজে না খোঁজে
শিথানের চাঁদ ঢলে পশ্চিমের ঘোরে
ছেলে গেছে শুয়োর তাড়াতে
এখনো নাবায় পানি, শালুক জাগেনি।
পিঠে-পিঠে দেয়াল, ঘামে-নুনে মাখামাখি তিন শূন্য তিন
চুলে জট; জোঁক টানে, মশা খায়
‘আলম তোর কাছে বিড়ি আছে’
আশ্বিন-কার্তিক যায়, কে খোঁজে না খোঁজে
শিথানের চাঁদ ঢলে পশ্চিমের ঘোরে
ছেলে গেছে শুয়োর তাড়াতে
এখনো নাবায় পানি, শালুক জাগেনি।
: ভাই খুব জাড় লাগে!
: আমারে জড়ায়ে ধর
বালিতে আটকে আছে ছিন্ন মাথা
পদ্মা-যমুনা নামে, সিঁথির সিঁদুর নামে
গুলিবিদ্ধ হাতে তবু ওড়ে সেই সূর্যের রঙ।
: আমারে জড়ায়ে ধর
বালিতে আটকে আছে ছিন্ন মাথা
পদ্মা-যমুনা নামে, সিঁথির সিঁদুর নামে
গুলিবিদ্ধ হাতে তবু ওড়ে সেই সূর্যের রঙ।
পৌষ শুধু পৌষ নয়, এ মাস ঘ্রাণের
এ মাস নিজের কাছে নিজের ফেরার
পিঁপড়েও ফিরেছে ঘরে, প্রিয় ঘাসের পিঠে বসে
ঘৃণাভরে দেখেছে রক্তাক্ত বুট আর অস্ত্রের ধার
সমর্পণের কী লজ্জা খুঃ!
মার্চ থেকে ডিসেম্বর
দীর্ঘ এক নদী হয়ে উদার আকাশ হয়ে
রেসকোর্সের মাটি ছুঁয়ে বলে :
এ দেশ আমার!
এ মাস নিজের কাছে নিজের ফেরার
পিঁপড়েও ফিরেছে ঘরে, প্রিয় ঘাসের পিঠে বসে
ঘৃণাভরে দেখেছে রক্তাক্ত বুট আর অস্ত্রের ধার
সমর্পণের কী লজ্জা খুঃ!
মার্চ থেকে ডিসেম্বর
দীর্ঘ এক নদী হয়ে উদার আকাশ হয়ে
রেসকোর্সের মাটি ছুঁয়ে বলে :
এ দেশ আমার!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন