ক্ষমাই প্রার্থনা
আহসান হাবীবআজন্ম সঞ্চিত ঋৃদ্ধ শব্দাবলী কথামালা
কবিতার সে সমৃদ্ধ কারুকাজ, আজ
আমাকে এমন করে করবে প্রতারণা
স্বপ্নে ভাবিনি।
কোনোদিন ভাবতেই পারিনি
শৈশব কৈশোর আর যৌবনে লালিত
উপমা প্রতীক ছবি
সব একে একে ভুলে যাবো
এবং এমন এক বোবা অন্ধকারে
ডুবে যাবো কোনোদিন
কখনো ভাবিনি।
কখনো ভাবিনি আমি
একদা এমন এক অক্ষমতা
অস্থির ব্যাকুল করে তুলবে প্রাণ
কথার নদীর মরা বুকে
শুধু বুক জ্বলবে, আর
নতমুখে অপরাধী
আমাকে দাঁড়াতে হবে
মঞ্চভস্ম বুক নিয়ে, শব্দের কাঙাল।
মুহূর্তে নিজেকে আমি সঁপে দিয়ে ঝড়ের থাবায়
ছিন্নভিন্ন হয়েছি এবং বুঝতে চেয়েছি কিছু
কিছুই বুঝিনি।
উন্মত্ত ঢেউয়ের বুকে যতক্ষণ সম্ভব সাঁতার কেটেছি
মনে মনে
অবশেষে হাতের শিথিল কব্জি থেকে
খসে গেছে বুকের দুলাল
তবুও বুঝিনি, আহা বুকের দুলাল যার গেছে
তার ব্যথা।
কণ্ঠলগ্ন প্রেয়সীকে ঢেউয়ের পাহাড়ে
আছড়ে আছড়ে যতবার কাঁদতে চেয়েছি, ততবার
সামনে খাড়া সুস্থির বনানী আর শুভ্র রোদ
আমার দু’চোখ
জ্বালিয়েছে
আরো বোবা অন্ধকারে নিয়ে গেছে ঠেলে।
ভাবতে চেয়েছি আমি
ভাই গেলো বোন গেলো ভেসে,
বৃদ্ধ পিতা রুগ্ন মা আমার
আমার একান্ত নিরাপদ জীবনের কামনাতে
নিয়োজিত সবশেষ মুহূর্ত বিলিয়ে
ভেসে ভেসে চলে গেলো মৃত্যুর অতলে।
তবুও পারিনি হতে
সেই ভাই,
প্রলয়ের অন্ধকারে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া ভাই-এর বোন-এর।
পারিনি সন্তান হতে সেই বৃদ্ধ পিতা কিংবা রুগ্না মার যার
সর্বশেষ নিঃশ্বাসেও উচ্চারিত রেখেছিলো
আমার জীবন আর কল্যাণ কামনা।
সব স্বজনের শব সামনে নিয়ে যে বৃদ্ধ অথবা
যে কিশোর
দাঁড়িয়ে ভয়াল সেই মৃত জনপদে
আমি তার দু’চোখের জলে
ভাসতে চেয়েছি যতবার
ততবার নিজেকে সৌখিন এক অভিনেতা ভেবে
নিজের লজ্জায় নিজে কেঁদেছি
এবং বুঝেছি নিশ্চিত
কল্পনার অতীত যা তাকে
কল্পনায় নিয়ে আসা
কখনো সম্ভব নয়, শুধু
ঘটনাই ঘটনার সাক্ষী হতে পারে।
এই আর্তস্বর আর এই হাহাকারের শিকার
শব্দের কাঙাল আমি
কেবল নীরবে
একান্তে দাঁড়াতে পারি
এবং জানাতে পারি
আমার এ অক্ষমতা,
ক্ষমাপ্রার্থী হতে পারি
মৃত আর মৃতপ্রায়
এই সব মথিত আত্মার কাছে
গলিত শবের
পবিত্র দুর্গন্ধ কিছু গায়ে মেখে
রুগ্ন এ আত্মার শুশ্রƒষায় রত হতে পারি।
* প্লাবন: নভেম্বর ১২, ১৯৭০
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন