মঞ্চে দেখা দাও
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীহঠাৎ আঁধার ছিঁড়ে পরদা উঠে গেল, অশরীরী
কতগুলি ছায়ামূর্তি মঞ্চের উপর এতক্ষণ
ধেই ধেই তাণ্ডব নর্তনে নাচছিল-
হঠাৎ কোথায় যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল তারা।
কোথা থেকে অলৌকিক আলোয় আলোকময়
হল সেই মঞ্চ, নেপথ্যে হাজার বেহালায়
ছড়ে ছড়ে উচ্চকিত ঝঙ্কার জাগল।
রুদ্ধশ্বাস প্রহরের পাথর উধাও, শুধু এক
টনটনে ব্যথার অনুভূতি, শুধু এক বোঝা ব্যথা
শুধু এক চাপা ভয়...
বন্ধুরা, সাথীরা, নিমজ্জিত
দুঃস্বপ্নের লুপ্ত নাবিকেরা, তোমরা কোথায় আজ?
আলোকিত রঙ্গমঞ্চে তোমাদের খুঁজি।
মুক্তির চত্ত্বরে আজ ফুরফুর হাওয়ায় ঘোরে
কত না নাগর। কেবল তোমরা নেই-
যারা একদিন বন্ধু ছিলে, সঙ্গী ছিলে, ভাই ছিলে
আজ অঘ্রাণের শেষে নবান্নের দিনে
যারা নেই, তাদের স্মরণে কিংবা তাদের সম্মানে
অনন্ত আমি তো বলব না তোমরা সবাই মুক্তির সেনানী ছিলে।
সবাই ছিল না। তোমাদের অনেকেই
নিমগ্ন সংসারী ছিলে, কেউ কেউ শিল্পী ছিলে।
তোমাদের কেউ কেউ যৌবনের আদর্শবাদের
রঙিন ঘুড়ির সুতো ছিঁড়ে দিয়ে নাটাই গুটিয়ে
নিঃশব্দে লুকিয়েছিলে অন্ধকার সিঁড়ির আড়ালে।
কেউ কেউ মনেপ্রাণে জনতার করতালি
চেয়েছিলে। সে জন্য আমিও দুষব না।
আমি জানি কেউ কেউ প্রেয়সীর হাসি ভালবেসে
উজ্জ্বল পণ্যের লোবে অথবা এমনি আর কোনো
দুর্বলতা বশে খরদুপুরের রোদে ঘেমেছিলে-
সাদামাটা সংসারের জনাকীর্ণ পথের পথিক।
অনেকে সামান্য ছিলে, অসামান্য কেউ কেউ।
আমি শুধুই চাই তোমরা সবাই ফিরে এস,
একবার এস, কিছুক্ষণ থেকে যাও দেখে যাও
আলোকিত রঙ্গমঞ্চে আমরা সবাই, একসাথে
হাতে হাতে- ভয় নেই, যদিও পাশেই সাজঘরে
থরে থরে নায়কের বীরসজ্জা বিস্তর, তোমরা
যে যেমন ছিলে, অবিকল মঞ্চে এসে একবার দেখা দাও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন