ফলা: ব্যাঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে ফলা বলে।
বাংলা ০৬ টি ফলা রয়েছে। যেমন:
১. ণ/ন ফলা - রত্ন, স্নাতক, কণ্ঠ
২. ব ফলা - দ্বারা, বিশ্ব, আব্বা, লম্ব, উদ্বেগ, দিগ্বিদিক
৩. ম ফলা - স্মরণ, ছদ্ম, বাগ্মী, বাল্মিকী, উন্মা, বাঙ্ময়, আম্মা
৪. য ফলা - ব্যাকরণ, অন্য, সন্ধ্যা
৫. র ফলা - শ্রাবণ, নেত্রী
৬. ল ফলা - শ্লাঘা, উল্লেখ
🔻ব- ফলার উচ্চারণ
ফলার উচ্চারণ নিয়ে অনেকক্ষেত্রে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। ফলা ব্যবহারের নিয়মগুলো না জানা এর প্রধান কারণ। আজ আমরা ব- ফলার নিয়মগুলো জানার চেষ্টা করব।
◾নিয়ম-০১: শব্দের শুরুতে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত ব-ফলা সাধারণত অনুচ্চারিত থাকে।যেমন:
জ্বালা > জালা
ধ্বনি > ধোনি
শ্বাস > শাঁশ
◾নিয়ম-০২: শব্দের মধ্যে বা শেষে ব-ফলা থাকলে সংযুক্ত ব্যঞ্জনটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়।যেমন:
বিশ্ব > বিশশো
রাজত্ব > রাজোততো
পক্ব > পককো
◾নিয়ম-০৩: যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে ব- ফলা ব্যবহৃত হলে সেই ব- ফলার কোনো উচ্চারণ হয় না। যেমন:
উজ্জ্বল > উজজোল
সান্ত্বনা > শানতোনা
দ্বন্দ্ব > দনদো
◾নিয়ম -০৪: গ,ম এবং ব এই তিনটি বর্ণের সঙ্গে ব- ফলা যুক্ত হলে তার স্বাভাবিক উচ্চারণ হয়। যেমন:
গ- এর সঙ্গে ব্যবহার
দিগ্বিদিক> দিগবিদিক
দ্বিগ্বলয়> দিগবলয়
ঋগ্বেদ> রিগবেদ
ম- এর সঙ্গে ব্যবহার
গম্বুজ >গোমবুজ
নীলাম্বরী> নিলামবোরি
সম্বল> শমবোল
ব এর সঙ্গে ব্যবহার-
আব্বা> আববা
সাব্বাস> শাববাশ
নব্বই> নববোই
◾নিয়ম -০৫: উৎ- উপসর্গের সঙ্গে ব- ফলা যুক্ত হলে সেক্ষেত্রে ব- এর স্বাভাবিক উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন:
উদ্বেগ > উদবেগ
উদ্বোধন > উদবোধন
উদ্বাহু > উদবাহু
🔻র- ফলার উচ্চারণ
বাংলা ভাষায় অনেক শব্দে র-ফলার ব্যবহার পাওয়া যায়।আশাপ্রদ বিষয় এই যে, র- ফলা ব্যবহারের নিয়মগুলো বেশ সহজ এবং অল্প প্রচেষ্টাতেই আপনি তা আয়ত্ত করতে পারবেন। চলুন একটু চেষ্টা করে দেখি-
🔹১. পদের আদি ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে র- ফলা যুক্ত হলে তার উচ্চারণ 'ও' কারান্ত হয়। যেমন:
প্রকাশ > প্রোকাশ
প্রণাম > প্রোনাম
গ্রন্থ > গ্রোনথো
🔹২. পদের মধ্যে কিংবা অন্তে ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে র- ফলা যুক্ত হলে সংশ্লিষ্ট বর্ণটির দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন:
রাত্রি > রাতত্রি
ছাত্র >ছাতত্রো
বিদ্রোহ >বিদদ্রোহো
🔹৩. যুক্ত ব্যঞ্জনের সাথে র- ফলা ব্যবহৃত হলে এর স্বাভাবিক উচ্চারণ বজায় থাকে। যেমন:
অস্ত্র > অসত্রো
যন্ত্র > যনত্রো
কেন্দ্র > কেনদ্রো
----
🔻য- ফলার উচ্চারণ
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অনেক শব্দে ফলার ব্যবহার আছে। একই ফলা শব্দে ব্যবহারের স্থানভেদে ভিন্ন ভিন্ন উচ্চারণ ধারণ করে। সে অর্থে বলা যায়, ফলার উচ্চারণ জানা না থাকলে অনেক শব্দের উচ্চারণেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।
য-ফলার নিয়মগুলো জানবো আজ।
🔸নিয়ম- ০১: 'অ' অথবা 'আ' কারান্ত হলে য-ফলার উচ্চারণ সাধারণত 'অ্যা' হয়। যেমন:
অ-কারান্ত উচ্চারণ
ব্যক্ত > ব্যাকতো
ব্যথা > ব্যাথা
আ- কারান্ত উচ্চারণ
ব্যাকরণ > ব্যাকরোন
ন্যায্য > ন্যাজজো
🔸নিয়ম-০২: পদের মধ্যে বা অন্তে য-ফলা সংযুক্ত হলে যুক্ত বর্ণটি দ্বিত্ব উচ্চারণ হয়। যেমন :
অদ্য > অদদো
শস্য > শোশশো
গদ্য > গোদদো
🔸নিয়ম-০৩: পদের মধ্যে বা অন্তে যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণের (একাধিক ব্যঞ্জনযোগে গঠিত) সাথে ব্যবহৃত য-ফলা সাধারণত অনুচ্চারিত থাকে। যেমন:
সন্ধ্যা > শোনধা
স্বাস্থ্য > শাসথো
সন্ন্যাসী >শোননাশি
🔸নিয়ম -০৪: শব্দের মধ্যে বা অন্তে ব্যবহৃত 'য'-ফলা তার পূর্ববর্তী 'অ' বা 'অ-কারান্ত' বর্ণের উচ্চারণকে প্রভাবিত করে। যেমন:
পদ্ম - পদ্-দোঁ
পদ্য - পোদ্-দো
অন্ন - অন্-নো
অন্য- ওন্-নো
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন