সোমবার, ৯ জুন, ২০১৪

নেকড়ে - জয়দেব বসু


নেকড়ে

জয়দেব বসু

বেশ করেছি ভেঙেছি, মাইনফ্যুয়েরর আদভানি
বলেছেন- ওটা আগে মন্দিরই ছিল
আর যদি নাও থাকে তাব্বি বেশ করেছি
মা কাসম, আবার ভাঙবো
জ্ঞান দেবার তুমি কে হে মাল?
তুমি আমায় খেতে দাও?
খোলা বাজারে চালের কিলো কত জান?
জান, ইট আঠারোশ’ টাকা হাজার
এমনকি শঙ্কর মাছও বাইশ টাকা কিলো
এক লিটার কেরোসিন
খুঁজতে হাঁটু খুলে যায় আমার বাপের।
আবে হ্যাঁ,
বাপও একদিন মাস্টারই ছিল,
তুমি শালা পেনশন দিয়েছো?

ফুটানি ছাড়ো ওস্তাদ
তেত্রিশ বছর কাটলো,
লাইফের হার আন্ধি গলি আমি চিনে নিয়েছি
মতিচ্ছন্ন ভবীতব্য
আর এর জন্য তুমিইতো দায়ী
আমার এই কপাল থেকে তলপেট বরাবর
লম্বালম্বি রক্তের দাগ, তার উপর
বিএসএফ ক্যাম্প, তার উপর টহল
তার উপর রাহাজানি, নিরন্ন
মানুষের ঝাাঁক
এসবই তো তোমারই জন্যে,
তোমারই জন্যেই তো এতো গুন্ডাগর্দি
শহর জুড়ে কারফিউ, বিস্ফোরণ, লুটতরাজ
আর শালা পিরিত মারিয়ে
বলছো- একই বৃন্তে দুটি কুসুম
কুসুম টুসুম আবার কী, এ্যাঁ
কুসুম টুসুম আবার কী
সেই অর্ধেন্দু মুস্তাফির টাইমে কুসুম নামে
একটা মেয়ে ছিল হাড়কাঁটায়।
তারপর থেকে কোনো কুসুম টুসুম নেই
জিন্দেগী বেকুসম- বেরাহাম
বহুত ক্ষতি তুমি আমার করে দিয়েছ গুরু
আমারো এক সময় ছিল টলটলে চোখ,
সেই চোখে ছিল স্বপ্ন,
সেই স্বপ্নমাখা চোখে
তুমিই ঢুকিয়ে দিয়েছো বিষ।
নিজের ঘর, টু-ইন-ওয়ান, ইংরেজি স্কুল,
এলিট সিনেমা, লাল ইয়ামাহা, ইয়ামাহার
পিছনে ডলি, ডলির উড়তে থাকা চুল,
আর যখন বেসাহারা আমি ডুবে যাচ্ছি সেই স্বপ্নে
যখন কলাবাগান থেকে মা-বাপ ছেড়ে
ডলি পালিয়ে এসেছে আমাকে হ্যাঁ হ্যাঁ
একমাত্র আমাকেই বিয়ে করবে বলে।
তখন তুমি আলগোছে আমার চুলে দিয়েছ জট,
ছিঁড়ে দিয়েছ জামা, খুলে দিয়েছ শুকতলা
বার করে দিয়েছ পাঁজর,
ঠায় চার ঘন্টা-
চার ঘন্টা ডলি দাঁড়িয়েছিল রেজিস্ট্রি
অফিসের সামনে।
আমি আসিনি।
না, না না না না, ও মুসলমান বলে নয়,
কী খাওয়াবো আমি?
আমার আয় কী?
নিজের ঘর, টু-ইন-ওয়ান, ইংরেজি স্কুল,
এলিট সিনেমা, আমার যে চাকরি নেই
ব্যবসার পুঁজি নেই, এক লিটার কেরোসিন
খুঁজতে হাঁটু খুলে যায় আমার বাপের
তখন কোথায় ছিলে শালা তুমি?
কোথায় ছিল তোমার সম্পিরিতের
কাননে কুসুম কলি?
বেশ করেছি ভেঙেছি।
হিন্দুর দেশ হলে মন্ত্রী হবো আমি
কিস্সু করতে পারনি তুমি কিস্সু না।
পাক্কা পাঁচ ঘন্টা ধরে ভেঙেছি
আর তুমি ইঁদুরের মতো গর্তে সেঁধিয়ে
থেকেছো পাক্কা ন’ঘন্টা
কিস্সু ছিঁড়তে পারনি
একটা চুলও না
আর পারবেও না।
যাও- ফোটো
নিজের জ্ঞান নিজের কাছেই রাখো
আহ্!
আমি জানি
এসব কোনো পথ না
আমি জানি এইভাবে সব কিছু ভাঙতে
ভাঙতে একদিন আমি নিজেই ভেঙে
চুরমার হ’য়ে যাবো
এ খেলার এটাই নিয়ম।
আমি জানি।
কিন্তু কি করতে পারি আমি?
আমার তো কিচ্ছু নেই।
অতীত নেই, বর্তমান নেই, ভবিষ্যত নেই,
একটা কিছুতো আমায় করতে হবে নাকি?
মনে নেই- এই ভাঙনের নিরাশ্রয়ী
রুদ্ধশ্বাস পথে একদিন তুমি
আমাকে ঠেলে দিয়েছ।
তখন অন্ধের মতো আমি ছুটে গেছি।
সেই অধি বাস্তবতার সুড়ঙ্গ পথে
যেখানে মোড়ে মোড়ে ফুটন্ত জলের
ফোয়ারা, উড়তে থাকা বিশ্বাসের ছাই।
সেইখানে একের পর এক ছায়ামূর্তি
আমাকে শিখিয়েছে, প্রতিহিংসার দোঁহা
শিখিয়েছে- খিদের জ্বালায় মরিয়া যে মানুষ
ঢুকে পড়ছে জয়ন্তি বাজার থেকে বেনাপোলে।
সেই তোমার মূল শত্রু।
তাদের টুটি এক্ষুণি ছিঁড়ে না দিলে
তোমারই একবেলার ভাতে পড়বে টান,
ক্ষুধার্তের বিচারের ক্ষমতা থাকে না
তাই ডান হাতে তার নলি টিপে ধরে
যেই বাম হাত তুলেছি শূন্যে
চিৎকার করে বলতে গেছি ‘হাই আদভানি’
তখন তুমি আমায় থামতে বলছো?
কিন্তু এখন কি থামা যায়
এখন আমার নখগুলো সব ধারালো
আঙুলগুলো সব থাবা
ধমনীর মধ্যে ছুটছে উষ্ণ¯্রােতা মদ
এখন কি থামতে বললেই
থামা যায়?
বল
থামা যায়!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ক্লিক করলেই ইনকাম