বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০১৪

প্রেম / সঞ্জিব চট্টোপাধ্যায়


প্রেম
সঞ্জিব চট্টোপাধ্যায়


    আমার সেই বয়সে একবার প্রেমে পড়ার ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিল। সেই বয়েস? যে বয়েসে ঠোঁটের ওপর কাঁচ কাঁচ গোঁফের দুর্বো জন্মায়। দাড়িতে দু-এক গোছা ছাগুলে চুল দেখা দেয়। গলাটা একটু ভারি ভারি হয়। মানুষ পাকা কথা বলতে শেখে। সবজান্তা, হামবড়া ভাব। লঘু গুরু জ্ঞানশুন্য। সব কথাতেই এক কথা, যান যান, আপনি কি বোঝেন, আপনি কি জানেন?
    সেই বয়েস।
    প্রেমে পড়তে হলে একটি মেয়ে চাই। যে সে মেয়ে হলে হবে না। সুন্দরী হওয়া চাই। ডানা কাটা না হোক, দেখলে যেন প্রেমের উদয় হয়। নায়িকাদের বর্ণনা কত উপন্যাসে পেয়েছি। ছায়াছবির পর্দায় দেখেছি। চাঁদের আলোয় ঝিলিক ফুটেছে। গাছের ডাল নায়িকা গান গাইছে। ঝোপে কোকিল ডাকছে কু-উ-উ।

    আমার বন্ধু সুখেন সেই বয়েসেই আমার চেয়ে অনেক বেশী পেকেছিল। হিন্দী সিনেমা দুমুড়ি চালে দেখত। ইংরেজী ছবির হিরো-হিরোইনের নাম কন্ঠস্থ ছিল। বুকপকেটে মেরিলিন মোনরোর ছবি পুষত। সে এক ছেলে ছিল বটে।
    সুখেন বললে, সব মেয়েই তো আর প্রেমে পড়ে না। যেমন ধর সকলের সর্দি হয় না। ন’মাসে ছ’মাসে হয়ত একবারই হল। কারুর আবার বারো মাসই সর্দি। সকাল হল তো ফ্যাঁচোর ফ্যাঁচোর হাঁচি। একে বলে সর্দির ধাত। এই রকম কারুর কাশির ধাত, কারুর পেট খারাপের ধাত। সেই রকম কোন কোন মেয়ের প্রেমের ধাত থাকে। ধাত বুঝে এগুতে হয়।
    আমি বললুম - সে আমি কি করে বুঝব ভাই?
    -খোঁজখবর নিতে হবে। অতই সোজা চাঁদু। ঘুরে ঘুরে বাজার দেখ। তারপর ঝোপ বুঝে মার কোপ। রাস্তায়, ঘাটে, বাসে, ট্রামে যেখানেই দেখবি কোন মেয়ে তোর দিকে পুটুস করে তাকিয়েছে, তুই ক্যাবলার মত চোখ সরিয়ে নিবি না, তুইও তাকাবি কটমট করে। বড় বড় চোখে। মেয়েটা যদি আবার তাকায়, তোর চোখে চোখ পড়বেই। চোখে যাদু থাকে, জানিস?
    -না ভাই।
    -কি জানো তুমি? চোখের ফান্দে আটকে ফেলবি। চোখে হাসবি। চোখে চোখে বলবি, সুন্দরী, তুমি আমার, তুমি আমার। সম্মোহিত করে ফেলবি। নিজেকে ভাববি অজগর, সামনে তোর হরিণী।
    -তুই চোখ মারতে বলছিস? ও ভাই অসভ্য ছেলের কাজ।
    -তুই একটা গর্দভ। চোখ মারা নয়। চোখে ভাবের খেলা। সুচিত্রা সেনের অভিনয় দেখেছিস? এই চোখে জল, এই চোখে হাসি, এই চোখে প্রেম, এই চোখে ঘৃণা। চোখেই মনের প্রকাশ। তেমন ভাবে তাকাতে পারলে রয়েল বেঙ্গল ল্যাজ গুটিয়ে পায়ের তলায় লুটিয়ে পড়ে।
    -ও ভাই আমি পারব না। আমার ক্ষমতায় কুলোবে না। আমি কি সুচিত্রা সেন?
    দুর মড়া! সুচিত্রা সেনের মত অভিনয় ক্ষমতা, চোখের ভাষার কথা বলছি। বাড়িতে বড় আয়না আছে?    (তা আছে।)
    -’আয়নার সামনে দাঁড়াবি, দাঁড়িয়ে চোখের ট্রেনিং শুরু করবি। ঘরে কাউকে ঢুকতে দিবি না। হাসবি, কাঁদবি, রাগবি, গলবি, চমকাবি, চমকে দিবি। মুখের কিন্তু কোন পরিবর্তন হবে না। সব চোখে। চোখকে খেলাবি।
    এই হল তোর প্রেমের প্রথম পাঠ। এইটে উতরে গেলে দ্বিতীয় পাঠ পাবি।’
    মনে মনে ব্যাপারটা চিন্তা করে সুখেন ইয়ারকি করছে বলে মনে হল না। সত্যিই তো, বশীকরণ বলে একটা ক্রিয়া অবশ্যই আছে।
    যাদুকর পি. সি. সরকার হল-সুদ্ধ লোককে হিপনোটাইজ করে কত খেলাই তো দেখিয়ে গেছেন। সেই সময়ের খেলা। নটার সময় সাতটা বাজিয়ে ছেড়ে দিলেন।

    দুপুরবেলা বড় বউদির ঘরে চোখের ট্রেনিং শুরু হল।
    নিজের চোখ আগে কখনও আমি এমন করে দেখিনি। আমরা সাধারণত আয়নার সামনে দাঁড়াই। ঝট্ করে চুল আচরাই, সট্ করে সরে আসি।
    একেবারে নিজের মুখোমুখি, ফেস টু ফেস। নিজেকে নিজে দেখা। কখনও প্রেমের দৃষ্টিতে, কখনও ঘৃণার দৃষ্টিতে, কখনও আমন্ত্রণের দৃষ্টিতে, ’আও না পেয়ার করে, লাভ করে, আও না।’
    দুপুরটা কয়েক দিন এইভাবেই বেশ কাটল। দৃষ্টিতে ঠেকিয়ে। নিজের সঙ্গে নিজে চোখে চোখে কথা বলে। হঠাৎ একদিন ছোট বোনের কাছে ধরা পড়ে গেলুম। আমি জানতুম না ধরা পড়ে গেছি। ও কোন্ সময় পিছন থেকে দেখে সরে পড়েছে। মনে হয় একটু ভয়ও পেয়েছিল। চুপিচুপি বড় বউদিকে বলেছিল, ’দাদা দুপরবেলা তোমার ঘরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি করে বল তো। আমাদের পুসীটাকে আয়নার সামনে বসিয়ে দিলে ঠিক ওই রকম করে। ফ্যাঁস-ফোঁস, থাবা-মারা।’
    বড় বউদি বড় চালাক মেয়ে। দুপুরে পড়ে রইলেন মটকা মেরে। সাধনপথে বেশ কিছু দুরে এগিয়েছি। একেবারে তন্ময়। চোখে চোখে হাসি চলছে। বউদি বললে, কি হচ্ছে?
    চমকে উঠেছিলুম। ধরা পড়ে গেছি, কি লজ্জা।
    বললুম, অভিনেতা হব তো, তাই একটু চোখ সাধছি।
    -সে আবার কি? লোকে তো গলা সাধে, চোখ সাধা জিনিসটা কি?
    -আছে, আছে। সে তুমি বুঝবে না বউদি।

ছাদের ঘরে পুরনো বইয়ের গাদা থেকে ছেঁড়া ছেঁড়া একটা বই পেলুম, ত্র্যটক সাধনা। তিন-চার হাত দুরে দেওয়ালের গায়ে সবুজ একটা বিন্দু লাগিয়ে, পদ্মাসনে বসে, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাক, যেন চোখের পলক না পড়ে। পাঁচ সেকেন্ড, দশ সেকেন্ড, মিনিট, এক দুই পাঁচ দশ, ঘন্টায় চলে যাও। তারপর দিনে।
’তোমার চক্ষুদ্বয়ে জ্যোতি খেলিবে। অলৌকিক দৃশ্যসমুহ চক্ষুর সম্মুখে ভাসিয়া উঠিবে।
যাহার দিকে তাকাইবে সেই তোমার বশীভূত হইয়া কুক্কুর কুক্কুরীর ন্যায় পদপ্রান্তে পতিত হইবে, কম্পমান শাখার ন্যায়।’
ভজন করনা চাহি রে মনুয়া, সাধন করনা চাহি রে মনুয়া। সেই সাধনে অ্যায়সা ফল ফলল। একদিন রাস্তা দিয়ে দুটি মেয়ে চলেছে। একটিকে মনে বড় ধরে গেল। মনে হল প্রেমের ধাত। সুখেন যেমন বলেছিল, সর্দির ধাত, কাশির ধাত, পেটের অসুখের ধাত। মিষ্টি, নরম চেহারা। অবাক জলপানের মত চোখ। ডুরে শাড়ি পরেছে। রাস্তায় যেন কাঁপন ধরেছে।
ভ্র“চাপে নিহতঃ কটাক্ষবিশিখো নির্ম্মাতু মর্ম্মব্যাথাং
শ্যামাত্যা কুটিলঃ করোতু কবরীভারোহপি মারোদ্যমম্।
টাটকা গীতগোবিন্দ ভলকে ভলকে বেরিয়ে আসতে লাগল। হে সুন্দরী, তোমার নজরোকা তীর ভুরুর ধনুর ছিলে টেনে অমন করে আর মেরো না। আমার মর্ম ফেড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে।
গীতগোবিন্দ আবৃত্তি করে ভীষণ সাহস এসে গেল। বল বীর নয়, তাকাও বীর। কি ভাবে তাকিয়েছিলুম জানি না। একটি মেয়ে আর একটিকে বললে, দ্যাখ ভাই, পাগলাটা তোর দিকে কি ভাবে তাকিয়ে আছে! তারপর রাস্তায় ষাঁড় দেখে মেয়েরা যে ভাবে হুটোপুটি করে পালায়, সেই ভাবে দুজনে, গলাগলি, টলাটলি করতে করতে পালাল। একজনের পা থেকে চটি ছিটকে নর্দমায় পড়ে গেল। অনেক দুরে গিয়ে তারা একবার ফিরে তাকাল ভয়ে ভয়ে। যেন দেখছে ষাঁড়টা কত দুরে।
মনে বড় ব্যাথা পেলুম। আরও অবাক হলুম, সবাই যখন বলতে লাগল চোখ রাঙাচ্ছ কেন? তোমার চোখ রাঙানির আমরা  তোয়াক্কা করি না হে। যার দিকে তাকাই তিনি একই কথা বলেন, চোখ পাকাচ্ছ কেন? মাথা ঠান্ডা কর, মাথা ঠান্ডা কর। গুরুজনের সঙ্গে কথা বলার সময় একটু সমীহ করে বলতে হয়।
বড় বউদির আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই চমকে উঠলুম, এ আবার কে রে! চোখ দেখলে মনে হয়, এখুনি গেয়ে উঠবে, ’ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান’। চোখের পাতা পড়ছে না, মণি দুটো স্থির। নিজেকে দেখে নিজেই ভয় পেয়ে যাচ্ছি। কান ধরে বলতে ইচ্ছে করছে, আর করব না স্যার।
চোখের ডাক্তার বললেন, এ কি করে এনেছ হে! একে বলে চোখ ঠিকরে যাওয়া। কি করে এরকম করলে? ভূত দেখলে এরকম হতে পারে। আমরা পড়ে এসেছি। তুমি বোসো, বোসো।
আউটডোরে কোন পেশেন্ট কখনও এমন খাতির পায় না। আমাকে চেয়ারে বসিয়ে, অন্য রুগীদের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে, তিনি একের পর এক ছাত্র আর অন্যান্য ডাক্তারদের ডেকে এনে দেখাতে লাগলেন। এ রেয়ার কেস, পড়া ছিল, দেখা ছিল না। তাঁরা আসেন, সামনে ঝুঁকে পড়ে দেখেন, চোখে যন্ত্র লাগান, আর বলেন, রেটিনা হুপ করে বেরিয়ে আসছে। ডাক্তারী ভাষা বোঝা যায় না। রেটিনা শব্দটা চেনা চেনা মনে হচ্ছে। হুপ শব্দ তো অনুমান করে। তার মানে, কিছু একটা হনুমানের মত লাফিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
চোখের পাওয়ার মাপতে মাপতে ডাক্তারবাবু বললেন, সত্যি করে বল তো বাবা, কি করে এমন করলে? ভূত নিশ্চই দেখনি, চোখের সামনে কাউকে কি খুন হতে দেখেছ?
-আজ্ঞে, ত্র্যটক সাধনা।
-সেটা কি বস্তু ভাই? পিশাচ সাধনা ধরনের কিছু?
-আজ্ঞে না, দেয়ালে সাঁটা একটা সবুজ বিন্দুর দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা তাকিয়ে বসে থাকা।
-সর্বনাশ! একে বলে ফিক্সড স্টেয়ার। আই বল সকেটে সেঁটে গেছে। এ দুর্বুদ্ধি তোমাকে কে দিলে?
-আজ্ঞে, প্রাচীন গ্রন্থ।
-সেটিকে পুড়িয়ে ফেল। খবরদার, ও সব আর ভুলেও করতে যেও না। এই নাও তোমার চশমার পাওয়ার। সঙ্গে গোটা তিনেক ব্যায়াম রইল।

চোখ বাঁচাতে ফের শুরু হল চোখের ব্যায়াম। চোখ ঘোরানো, চোখ নাচানো, চোখ পিট পিট, পাতা ফেলা আর খোলা। সুখেন ঠিকই বলেছিল, চোখ বড় সাংঘাতিক জিনিস।
চোখ ওই রকম করতে করতে এমন মুদ্রাদোষ দাঁড়িয়ে গেল সব সময়ই করে চলেছি, অজান্তেই করে চলেছি।
পিতৃবন্ধু বিধুজ্যাঠার মাথায় মাথায় তিন মেয়ে। সব কটি মেয়েই বেশ সুন্দরী। পিতৃদেব একদিন সকালে বললেন বিধুবাবুর বাড়ি থেকে চট করে একবার গুপ্তপ্রেস পাঁজিটা নিয়ে এসো তো।
 বিধুজ্যাঠার কড়া নাড়তেই দরজা খুলে দিল বড় মেয়ে রেখা। জিজ্ঞেস করলুম, বিধুজ্যাঠা আছেন, বিধুজ্যাঠা?
রেখা কেমন যেন থতমত খেয়ে গেল। আমতা আমতা করে বললে, হ্যাঁ বাবা আছেন।
রেখা পেছাতে শুরু করেছে। চোখে মুখে একটা ভয়, একটা কেমন যেন বিস্ময়ের দৃষ্টি।
আমি বললুম, একবার ডেকে দাও তো, একবার ডেকে দাও তো।
রেখা প্রায় ছুটে বাড়ির ভেতর চলে গেল। যেতে না যেতেই বিধুজ্যাঠা এলেন। চোখদুটো ডাঁটার মত লাল। বাঁজখাই গলায় বললেন, কি চাই?
সাধারণত তিনি এভাবে কথা বলেন না। অবাক হলুম। বললুম, পাঁজি আছে, পাঁজি, বাবা একবার চাইলেন।
’হ্যাঁ, আছে ছোকরা’-বলে ঠাস করে গালে এক বিরাশি সিক্কার চড় হাঁকড়ালেন।
এ আবার কি? চড় আবার কবে থেকে পাঁজি হল। কিছু বোঝার আগেই আমার হাত ধরে হিড় হিড় করে টানতে লাগলেন, আর বলতে লাগলেন, ’চল তোমার বাবার কাছে।’
(তিন মেয়ে রকে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল, অসভ্য ছেলে।)
আমি হাঁ হয়ে গেছি। অপরাধ জানলুম না ফাঁসিতে চলেছি।
বাবা বললেন, কি করেছিল কি বিধুদা? জুতো পায়ে ঠাকুর ঘরে ঢুকেছিল?
-তার চেয়েও অনেক গর্হিত কাজ, চোখ দিয়ে আমার মেয়েদের অশ্লীল, কামার্ত ঈঙ্গিত করেছে।
-ইজ ইট?
ডিফেন্সের কোন সুযোগই পেলুম না। কিল, চড়, ঝাঁটা, জুতো, লাঠি। মিনিট দশেক শরীরের উপর দিয়ে ভূমিকম্প চলে গেল। বড় বউদি এসে উদ্ধার করলেন। বড়দা বেরিয়ে এসে বললেন, ’ছি ছি, না জেনে শুনেই এত বড় একটা ছেলের গায়ে হাত তুললেন? সম্পুর্ণ নিরপরাধ একটা ছেলের গায়ে? জানেন না ও গুরুতর একটা চোখের অসুখে ভুগছে। মেজর মিত্রর চিকিৎসায় আছে।’
বাবা আর বিধুজ্যাঠা দুজনেই সমস্বরে বললেন, ’অ্যাঁ! বল কি? কই, তোমরা আগে তো কিছু বলনি! ছি ছি ছি।’
বিধুজ্যাঠা আমার পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বললেন, ’ক্ষমা কর বাবা। তুমি একবার আমার বাড়িতে চল। আমরা সবাই মিলে তোমার কাছে ক্ষমা চাই।’
কাঁদো কাঁদো গলায় বললুম, আজ আর আমার যাবার মত অবস্থা নেই জ্যাঠামশাই।
বিকেলের দিকে ভীষণ জ্বর এসে গেল। চোখ বুজিয়ে পড়ে আছি। সর্বঅঙ্গে বিষ ফোড়ার মত ব্যাথা। বউদি এসে কপালে হাত রেখে বললে, দেখ কে এসেছে তোমাকে দেখতে।
চোখ খুলে দেখি রেখা।
ভয়ে চোখ বুজিয়ে ফেললুম। যা দেখেছি তাই যথেষ্ট। এখনও হয়ত আমার চোখ সেই ভাবেই নাচছে। আবার না জুতো খেতে হয়।
বউদি বললেন, ’তাকিয়ে দেখ কে এসেছে?’
আমি ইচ্ছে করে প্রলাপ বকতে লাগলুম, না না, আমি আর যাব না, আর পাঁজি আনতে যাব না মা।
রেখা ফোঁস ফোঁস করে কেঁদে উঠল, ’বউদি আমিই দায়ী, আমিই দায়ী। কিছু হবে না তো? সেরে উঠবে তো?’ বউদি বললেন, ’বড় অভিমানি ছেলে, দেহের চেয়ে, মনে বেশী লেগেছে।’

চার বছর পরে মুসৌরীর এক হোটেলে আমি আর রেখা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। সামনে কাঁচের জানালা। সকালে রোদে হিমালয়ে সোনা খেলছে। রেখার কাঁধে আমার একটা হাত। রেখার একটা হাত আমার কোমরে। রেখার মাথা আমার কাঁধে।
আমি বলছি, সেদিন জুতো খাইয়েছিলে, আজ অন্য কিছু খাওয়াও।
রেখা বলছে, ’আজ যদি বাবা বেঁচে থাকতেন?’
আমি বলছি, আজ যদি দাদা বেঁচে থাকতেন?
চারপাশ ঝাপসা হয়ে আসছে। দরজার কাছ থেকে হোটেল-বয় বলছে, কফি, মেমসাব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ক্লিক করলেই ইনকাম