নদী
জীবনানন্দ দাসরাইসর্ষের ক্ষেত সকালে উজ্জ্বল হলো, দুপুরে বিবর্ণ হ’য়ে গেল
তারি পাশে নদী;
নদী, তুমি কোন্ কথা কও?
অশথের ডালপালা তোমার বুকের ’পরে পড়েছে যে,
জামের ছায়ায় তুমি নীল হ’লে,
আরো দূরে চ’লে যাই
সেই শব্দ পিছে-পিছে আসে;
নদী না কি?
নদী, তুমি কোন্ কথা কও?
তুমি যেন ছোটো মেয়ে- আমার সে ছোটো মেয়ে;
যত দূর যাই আমি- হামাগুড়ি দিয়ে তুমি পিছে-পিছে আসো,
তোমার ঢেউয়ের শব্দ শুনি আমি: আমারি নিজের শিশু সারাদিন
নিজ মনে কথা কয় (যেন)।
কথা কয়- কথা কয়, ক্লান্ত হয় নাকো
এই নদী
একপাল মাছরাঙা নদীর বুকের রামধনু
বকের ডানার সারি শাদা পদ্ম-নিস্তব্ধ পদ্মের দ্বীপ নদীর ভিতরে
মানুষেরা এই সব দেখে নাই।
কখন আমের বনে চ’লে গেছি
এইখানে কোকিলের ভালোবাসা কোকিলের সাথে,
এখানে হাওয়ায় যেন ভালোবাসা বীজ হ’য়ে আছে,
নদীর নতুন শব্দ এইখানে; কার যেন ভালোবাসা পুষে রাখে বুকে
সোনালি প্রেমের গল্প সারাদিন পড়ে
সারাদিন পাখি তাহা শোনে; তবু শোনে সারাদিন?
পাখিরা তাদের গানে এই শব্দ তবু
পৃথিবীর ক্ষেতে মাঠে ছড়াতে পারে না,
নদীর নিজের সুর এ যে!
নদী, তুমি কোন্ কথা কও?
গাছ থেকে গাছে, আর, মাঠ থেকে মাঠে রোদ শুধু মরে যায়
সব আলো কোন্ দিকে যায়!
নিজের মুখের থেকে রোদের সোনালি রেণু মুছে ফেলে নদী
শেষ রেণু মুছে ফেলে
সে যেন অনেক বড়ো মেয়ে এক-চুল তার ম্লান-চুল শাদা-
শুধু তার ফুল নিয়ে খেলিবার সাধ-
ফুলের মতন কোন্ ভালোবাসা নিয়ে,
ধানের কঠিন খোসা-খড়-হিম-শুকনো সব পাপড়ির মাঝে সেই মেয়ে
ইতস্তত ব’সে আছে;
গান গায়;
নদীর-নদীর শব্দ শুনি আমি।
নদী, তুমি কোন্ কথা কও?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন