সোমবার, ৯ জুন, ২০১৪

কবির মুক্তি

কবির মুক্তি

কাজী নজরুল ইসলাম

মিলের খিল খুলে গেছে!
কিলবিল করছিল, কাঁচুমাচু হয়েছিল-কেঁচোর মতন-পেটের পাঁকে কথার কাতুকুতু!
কথা কি ‘কত্থক’ এ নাচ নাচবে চৌতালে ধামারে ?
তালতলা দিয়ে যেতে হলে
কথাকে যেতে হয় কুঁতিয়ে কুঁতিয়ে
          তালের বাধাকে গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে
          এই যা:! মিল হয়ে গেল!
          ও তালতলার কেরদানি!-দুত্তোর!
মুরগিছানায় চিলের মতন
টেকো মাথায় ঢিলের মতন
          পড়বে এবার কথার বাণ্ডিল।
ছন্দ এবার কন্ধ-কাটা পাঁঠার মতন ছটফটাবে।
লটপটাবে লুচির লেচির আটার মতন!
অক্ষর আর যক্ষর টাকা গোণার মতো গুনতে হবে না।-
অঙ্ক-লক্ষ্মীর ভয়ে কাব্য-লক্ষ্মী থাকতেন
           কুঁকড়োর মতন কুঁকড়ে।

ভাববেন, মিলের চিল কখন দেবে ঠুকরে!
           আবার মিল!-
গঙ্গার দুধারে অনেক মিল,
কটন মিল, জুট মিল, পেপার মিল-
           মিলের অভাব কি?
কাব্য-লোকে মিল থাকবে কেন?
ওকে ধুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দাও!
          ওখানেও যে মিল আছে!
ধুলো যদি কুলোয় যায় চুলোয় যায়,
হুলো ভুলোয় যদি ল্যাজে মাখে!
           ল্যাজ কেটে বেঁড় করে দেবো!
           এঁড়ে দামড়া আছে যে!
আবার মিল আসছে!-মুশকিল আসান!
অঙ্ক-লক্ষ্মীকে মানা করেছিলাম মিলের শাড়ি কিনতে।
অঙ্ক-লক্ষ্মীর জ্বালায় পঙ্ক-লক্ষ্মী পদ্ম আর ফোটে না!
তা বলতে গেলে লঙ্কা-কাণ্ড বেঁধে যাবে!-
আজ বিনা প্রয়াসেই অনুপ্রাসের পাশ পেয়েছি দেখছি!
মিল আসছে- যেন মিলানের মেলায় মেমের ভিড়!
নাঃ !-কবিতা লিখি।
তাকে দেখেছিলাম-আমার মানসীকে
           ভেটকি মাছের মত চেহারা!
আমাকে উড়ে বেহারা মনে করেছিল!
           শাড়ির সঙ্গে যেন তার আড়ি।
           কাঁখে হাঁড়ি-মাথায় ধামা!
           জামা ব্লাউজ সেমিজ পরে না।
দরকারই বা কি?
           তরকারি বেচে।
           সরকারি ষাঁড়ের মতন নাদুসনুদুস!
           চিচিঙ্গের মতন বেণী দুলছিল।
সে যে-দেশের, সে-দেশে আঁচলের চল নাই!
           চলেন গজ-গমনে!
পায়ে আলতা নাই, চালতার রং!
           নাম বললে-‘আজুলি।’
আমি বললাম-‘ধ্যেৎ, তুমি কাজুলি!’
হাতে চুড়ি নাই, তুড়ি দেয় আর মুড়ি খায়।
গলায় হার নাই, ঘ্যাগ আছে।
পায়ে গোদ।
           আমি বলি, ‘প্যাগোডা সুন্দরী!’
           গান গাই, ‘ওগো মরমিয়া!’
ও ভুল শোনে! ও গায় -‘ওগো বড় মিঞা!’
            থাকত হাতে ‘এয়ার গান!’
ও গায় গেঁয়ো সুরে, চাঁপাফুল কেয়ার গান।-
দাঁতে মিশি, মাঝে মাঝে পিসি বলতে ইচ্ছে করে।
ডাঙর মেয়েরা আমাকে হাঙর ভাবে।
            হৃদয়ে বাঁকুড়ের দুর্ভিক্ষ।
ভিক্ষা চাই না, শিক্ষা দিয়ে দেবে।
তাই ধরেছি রক্ষাকালির চেড়িকে।
নেংটির আবার বকেয়া সেলাই!
কবিতা লেখার মশলা পেলেই হল
            তা না-ই হল গরম মশলা।-
নাঃ, ঘুম আসছে, রান্নাঘরের ধূম আসছে।
বৌ বলে, নাক ডাকছে, না শাঁখ ডাকছে।
আবার মিল আসছে-ঘুম আসছে-
দুম্বা ভেড়ার দুম আসছে!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ক্লিক করলেই ইনকাম