মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০১৪

রূপালি মানবী

রূপালি মানবী
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

রূপালি মানবী, সন্ধ্যায় আজ শ্রাবণ ধারায়
ভিজিও না মুখ রূপালি চক্ষু, বরং বারান্দায় উঠে এসো
ঘরের ভিতরে বেতের চেয়ার, জানলা বন্ধ দরজা বন্ধ
রূপালি মানবী, তালা খুলে নাও, দেয়ালে বোতাম আলো জ্বেলে নাও
অথবা অন্ধকারেই বসবে, কাচের শার্সি থাকুক বন্ধ
দূর থেকে আজ বৃষ্টি দেখবে, ঘরের ভিতরে বেতের চেয়ার, তালা খুলে নাও।
চাবি নেই, একি! ভালো করে দ্যাখো হাতব্যাগ, মন
অথবা পায়ের নিচে কার্পেট, কোণ উঁচু করে উঁকি মেরে নাও
চিঠির বাক্সে দ্যাখো একবার, রূপালি মানবী, এত দেরি কেন?
বাইরে বৃষ্টি, বিষম বৃষ্টি, ঝড়ের ঝাপ্টা তোমাকে জড়ায়
তোমার রূপালি চুল খুলে দাও, চাবি খুঁজে নাও-
তোমার রূপালি অসহায় মুখ আমাকে করেছে আরও উৎসুক-
ধাক্কা মারো না! আপনি হয়তো দরজা খুলবে, পলকা ও তালা
অমন উতলা রূপালি মানবী তোমাকে এখন হওয়া মানায় না
অথবা একলা রয়েছো-বলেই বৃষ্টি তোমাকে কোনো ছলে বলে
ছুঁতে পারবে না, ফিরবে না তুমি বাইরে বিপুল লেলিহান ঝড়ে-
তালা খুলে নাও।


রূপালি মানবী, আজ তুমি ঐ জানালার পাশে বেতের চেয়ারে
একলা বসবে আঁধারে অথবা দেয়ালে বোতাম আলো জ্বেলে নাও
ঠান্ডা কাচের শার্সিতে রাখো ও রূপালি মুখ, দুই উৎসুক চোখ মেলে দাও।
বাইরে বৃষ্টি, বিষম বৃষ্টি, আজ তুমি ঐ রূপালি শরীরে
বৃষ্টি দেখবে প্রান্তরময়, আকাশ মুচড়ে বৃষ্টির ধারা...
আমি দূরে একা বৃষ্টির নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছি, একলা রয়েছি,
ভিজেছে আমার সর্ব শরীর, লোহার শরীর, ভিজুক আজকে
বাজ বিদ্যুৎ একলা দাঁড়িয়ে কিছুই মানি না, সকাল বিকেল
খরচোখে আমি চেয়ে আছি ঐ জানলার দিকে, কাচের এপাশে
যতই বাতাস আঘাত করুক, তবুও তোমার রূপালি চক্ষু-
আজ আমি একা বৃষ্টিতে ভিজে, রূপালি মানবী, দেখবো তোমার
বৃষ্টি না ভেজা একা বসে থাকা।।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ক্লিক করলেই ইনকাম